ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) প্রশাসক বিহীন রয়েছে আজ ২১ দিন। চলতি মাসের ৬ তারিখ প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব হওয়ার পর থেকে খালি পড়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ এই পদটি। শুধু এই পদটি নয়, একই সঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ সাত বিভাগীয় প্রধান পদই শূন্য। প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা না থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে নাগরিক সেবা কার্যক্রম।
বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, আইন কর্মকর্তা, নিরীক্ষা কর্মকর্তা ও জনসংযোগ কর্মকর্তার পদে কেউ নেই। সংস্থাটির সূত্রগুলো বলছে, এসব পদে সরকার অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পদায়ন করে থাকে। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তুলনামূলক নিচের কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৯ আগস্ট সব সিটি করপোরেশন মেয়রদের অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। একই দিনে ওইসব সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিযুক্ত করা হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মহা. শের আলীকে। তিনি এক মাস দায়িত্ব পালন করে অবসরে চলে যান। এরপর প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলামকে। তিনি চলতি মাসের ৬ তারিখ পদোন্নতি পেয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়র সচিব হয়ে যান। এরপর থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক পদটি খালি পড়ে আছে। আজ ২০ দিন হলো প্রশাসক বিহীন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। প্রশাসক না থাকায় দাপ্তরিক, সেবামূলক এবং উন্নয়নমূলক কাজের ফাইল স্তূপ হয়ে আছে দপ্তরে। স্বাক্ষর না হওয়ায় সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে- অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল ও হিসাব বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসক না থাকার কারণে উন্নয়নকাজের নথি অনুমোদন নেওয়া যাচ্ছে না। সেবামূলক সংস্থা হিসেবে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়। এসব কাজ এখন বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ভিন্ন পরিস্থিতিতে একেক দিন একেক রকম সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অনেক কাজের চাহিদা আছে, সুপারিশ থাকে, এসব বাস্তবায়ন করার কেউ নেই।
শুধু প্রশাসকই নয়, করপোরেশনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা প্রধান নির্বাহী পদেও কেউ নেই গত এক মাস ধরে। সর্বশেষ এই পদে অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ২৪ ডিসেম্বর তিনি শেষ দিনের মতো অফিস করেছেন। এর পর থেকে এই পদ খালি। পরে সংস্থাটির সচিব মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঞাকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই পদে কর্মকর্তা না থাকার কারণে প্রশাসনিক ও মাঠপর্যায়ের প্রায় সব কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র সাহা বদলি ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে কবির গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে চলে যান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল ও হিসাব বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসক না থাকার কারণে উন্নয়নকাজের নথি অনুমোদন নেওয়া যাচ্ছে না। সেবামূলক সংস্থা হিসেবে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়। এসব কাজ এখন বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ভিন্ন পরিস্থিতিতে একেক দিন একেক রকম সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অনেক কাজের চাহিদা আছে, সুপারিশ থাকে, এসব বাস্তবায়ন করার কেউ নেই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার চাইলে সব সময়ের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তা অথবা বাইরে কোনো রাজনৈতিক দলের কাউকে প্রশাসক হিসেবে দিতে পারে। এতে তিনি সব সময় করপোরেশনের কার্যক্রমগুলো মনিটরিং করতে পারবেন। আর উন্নয়নমূলক কর্মকাে র গতি বাড়বে এবং সেবা গ্রহীতার ভোগান্তি লাঘব হবে।
তিনি আরও বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকার যদি এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে তাহলে মানুষের ভোগান্তি অনেকটা কমবে।