সংসদের উচ্চকক্ষে ভোটের অনুপাতের বণ্টন (পিআর) পদ্ধতি থাকা প্রয়োজন। এ পদ্ধতি না থাকলে ফ্যাসিবাদ আবার চালু হবে। এ ছাড়া শুধু উচ্চকক্ষ প্রথা চালু করলে হবে না, সেখানে কারা প্রতিনিধিত্ব করবেন সেটার তালিকা আগে প্রকাশ করতে হবে। উচ্চকক্ষ যেন ডাম্পিং স্টেশন অর্থাৎ অকার্যকর প্রতিনিধি না রাখা হয় সেটার জন্য আগেই তালিকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে উচ্চকক্ষে এক শতাংশ ভোটের হার রাখতে হবে, যেন ছোট দলগুলো অংশ নিতে পারে। সংসদের উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচন নিম্নকক্ষের আসনসংখ্যার ভিত্তিতে করা হলে তা পুরোপুরি পণ্ডশ্রম হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা।
গতকাল রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘সংসদের উচ্চকক্ষে ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন (পিআর) : নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। নাগরিক কোয়ালিশন নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলম। নাগরিক কোয়ালিশনের সহসমন্বয়ক ফাহিম মাশরুরের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার, ইসলামী আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, নাগরিক ঐক্যর সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. অসিফ শাহান।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংসদের উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচন নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যার ভিত্তিতে করা হলে তা পুরোপুরি পণ্ডশ্রম হবে। এতে উচ্চকক্ষ হবে নিম্নকক্ষের পুরোপুরি রেপ্লিকা (অবিকল প্রতিরূপ)। এতে দলের আধিপত্য আরও নিরঙ্কুশ হবে, স্বৈরাচার আরও পাকাপোক্ত হবে।
আসনভিত্তিক হলে উচ্চকক্ষ ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ডে’ পরিণত হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে জিততে পারবেন না এবং অন্য কোথাও জায়গা নেই, তাদের উচ্চকক্ষে পুনর্বাসন করা হতে পারে।
আসনভিত্তিক ও সংখ্যানুপাতিক দুটি পদ্ধতিই ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে বদিউল আলম বলেন, এ জন্য নিম্নকক্ষ আসন ভিত্তিতে আর দলের ভোটের হারের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ করা উত্তম হবে। রাজনৈতিক দলগুলোও এ বিষয়ে একমত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জুনায়েদ সাকী বলেন, যদি নিম্নকক্ষ পিআর হয় তাহলে উচ্চকক্ষে পিআর দরকার নেই। যদিও নিম্নকক্ষে এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ। সে ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষে আমরা পিআর চাই। উচ্চকক্ষের আসন হবে ১০০। এটা পিআর ছাড়া হলে শুধু টাকাই নষ্ট হবে।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বাংলাদেশ এখনো দুটা হাউস রক্ষণাবেক্ষণ করার মতো উপযুক্ত নয়। আমরা প্রথমে বলেছি, দুই কক্ষ করার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে সব রাজনৈতিক দল যদি চায় সে ক্ষেত্রে আমরাও রাজি। সে ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষ হবে পিআর পদ্ধতিতে।
গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, সংসদ হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। উচ্চকক্ষ হবে পিআর পদ্ধতিতে। সে ক্ষেত্রে এনসিসি প্রয়োজন নেই। দুই কক্ষে বিল পাস করতে হবে।
খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, উচ্চকক্ষে কারা প্রতিনিধিত্ব করবে এটা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য দরকার আগেই রাজনৈতিক দলগুলো থেকে ১০০ জনের তালিকা প্রকাশ করা। কারণ ক্ষমতায় যাওয়ার আগে তাদের সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আর সংবিধান পরিবর্তনের ছয় ও পাঁচজনের কমিটি রয়েছে, তাদের মধ্যে আটজন ঐকমত্যে আসতে হবে। যদি তাদের মধ্যে ঐকমত্য না আসে তাহলে কী হবে? এ বিষয়ে সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই।
ববি হাজ্জাজ বলেন, আপনারা যে সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন সেটার সঙ্গে প্রায়ই একমত। তবে জুলাই সনদে, জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সংগঠনগুলোর জন্য ভবিষ্যতে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের দায়ে কোনো ধরনের আইনি হয়রানি বা বিচারের মুখোমুখি না হওয়ার সাংবিধানিক সুরক্ষা থাকবে। এটার সঙ্গে আমি একমত নই।
শেখ ফজলুল করীম মারুফ বলেন, আমরা উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। এটা থেকে আমরা পিছপা হইনি। এ পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমরা বড় সমাবেশও করব।