বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্বাভাবিক অস্থিরতা ঠেকাতে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি বিশেষ তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ এবং আরও বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হওয়ার অংশ হিসেবেই এ তহবিল গঠন করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মুদ্রানীতি পর্যালোচনায় তহবিল গঠনের তথ্য জানানো হয়। গত এপ্রিল-মে মাসে আইএমএফের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি নিয়ে আলোচনার সময় বাংলাদেশ ব্যাংক এ তহবিল গঠনের প্রতিশ্রুতি দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ডলার কেনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সীমাবদ্ধতা থাকবে না। তবে বিক্রির ক্ষেত্রে আইএমএফ নির্ধারিত কিছু শর্ত মানতে হবে।’ মুদ্রানীতি পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে এমন একটি বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে, যেখানে বাজারের প্রভাব বেশি থাকবে। এতে রপ্তানি প্রতিযোগিতা বাড়বে, বিদেশি বিনিয়োগে আগ্রহ তৈরি হবে এবং শিল্পোন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, এ নীতি সফল করতে কার্যকর যোগাযোগ, দ্রুত বাস্তবায়ন এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য। ডলারের বিপরীতে টাকার অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ৪৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার কিনেছে। অন্যদিকে, কোভিড মহামারির সময় এবং পরে টাকার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করতে হয়েছে।
বিগত তিন অর্থবছরে (২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) নিট বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৭৪০ কোটি, ১৩৪০ কোটি এবং ৯৪০ কোটি ডলার। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায় এবং ধীরে ধীরে টাকার অবমূল্যায়ন করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ডিলারদের (এডি) জন্য লেনদেনে আরোপিত ১ টাকা স্প্রেড সীমা বাতিল করেছে। আগে প্রতিদিনের লেনদেনে ক্রয়-বিক্রয় হার একই রাখতে হতো। এখন ডিলাররা গ্রাহক ও অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে স্বাধীনভাবে দরদাম করতে পারবে।
স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৩ সালের ৩০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ স্থির বিনিময় হার চালু রাখে। ২০০৩ সালের ৩১ মে ভাসমান বিনিময় হার চালু হয়। ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৬ দশমিক ৪৫ টাকা। কিন্তু টাকার অতিমূল্যায়ন টেকসই নয় বুঝতে পেরে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ অবমূল্যায়ন করে।
২০২৪ সালের ৮ মে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে, যেখানে রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেটের ভিত্তিতে ১১৭ টাকা প্রতি ডলার মধ্য হার নির্ধারণ করা হয়। গত বছরের আগস্টে ওঠানামার সীমা ২ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ক্রলিং পেগ মধ্য হার বাড়িয়ে ১১৯ টাকা করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, বিনিময় হারে অধিক নমনীয়তা আনয়ন দেশের অর্থনীতিকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে আরও গভীরভাবে যুক্ত করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।