বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বেশ কিছু ফ্লাইটে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় যাত্রীদের সুরক্ষা ও আস্থা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় একাধিক তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এ বি এম রওশন কবীরের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এরই মধ্যে ঢাকা-আবুধাবি ফ্লাইটে টয়লেটের ফ্লাশ সম্পর্কিত ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ঘটে যাওয়া কারিগরি সমস্যাগুলোর বিস্তারিত পর্যালোচনার জন্য চার সদস্যের একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিটি ফ্লাইটভিত্তিক ঘটনার রক্ষণাবেক্ষণ রেকর্ড এবং অপারেশনাল প্রসেস পর্যালোচনা করে ঘটনার মূল কারণ নির্ধারণ এবং কারিগরি সমস্যাগুলোর বিপরীতে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবহেলা বা গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তার দায়-দায়িত্ব চিহ্নিত করবে। একই সঙ্গে এ ধরনের সমস্যার পুনরাবৃত্তি রোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করবে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ওই কমিটি তার প্রতিবেদন দাখিল করবে। এতে আরও বলা হয়, দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে জনবল ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। দুজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে এবং আরও কয়েকজনকে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। একজন প্রকৌশলীকে শাস্তিমূলকভাবে বদলি করা হয়েছে এবং চট্টগ্রামে অন্য একজন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদান করা হয়েছে।
এ ছাড়াও কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে বিমান বিভিন্ন আউটস্টেশনে অতিরিক্ত চাকা মজুত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে আপৎকালীন প্রয়োজনে দ্রুত চাকা প্রতিস্থাপন করা যায়।
এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় চাকা সংগ্রহের জন্য ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে জেদ্দায় বিমানের চাকা ফেটে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে পরিচালককে (ফ্লাইট অপারেশনস) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিচালক (প্রকৌশল ও ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট) এবং প্রধান প্রকৌশলীদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ডিরেক্ট সুপারভিশন জোরদার করা হয়েছে।
গত ১৮ আগস্ট থেকে রাত্রিকালীন বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণ শিফট চালু হয়েছে, যা সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে বিমানের ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা চলছে। এ প্রক্রিয়ায় বোয়িংয়ের সঙ্গে আলোচনা করে কম্পোনেন্ট সার্ভিসেস প্রোগ্রাম (সিএসপি) তালিকা পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি রিকমেন্ডেড স্পেয়ার পার্টস লিস্ট (আরএসপিএল) অনুসারে যন্ত্রাংশের মজুত নতুনভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে।
প্রকৃত ব্যবহারিক তথ্যের ভিত্তিতে যন্ত্রাংশ সংগ্রহের জন্য টেইলরড পার্ট প্যাকেজ (টিপিপি) ব্যবস্থা পর্যালোচনায় রয়েছে। একই সঙ্গে প্রকৌশলীদের রি-কারেন্ট প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন অ্যাপ্রেন্টিস মেকানিক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রযুক্তিগত জনবল বাড়ানো এবং নিজস্ব দক্ষতা আরও জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
যাত্রী সুরক্ষা ও আস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে প্রযুক্তিগত নির্ভরযোগ্যতা এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা মান বজায় রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।