চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের যেখানে সেখানে পড়ে থাকে বর্জ্য। এখানে অবস্থানরত ও আগত রোগী, তাঁদের স্বজন এমনকি ডাক্তার-নার্সদের দম ফেলতে কষ্ট হয়। চলাচল করতে হয় নাকেমুখে রুমাল দিয়ে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বড় অভাব থাকায় হাসপাতালে এ দুরবস্থা হয়েছে। দূরবস্থার কথা কিন্তু শহরের অনেকেই কমবেশি জানে। কিন্তু প্রতিকার মেলে না। কেউ উদ্যোগী হয় না। একজন মানুষের কানে বার্তাটি পৌঁছার পর তিনি দুরবস্থা দূর করতে দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নিলেন। নিজের পকেটের টাকায় নিয়োগ দিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। গত সেপ্টেম্বর থেকে তিনজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে মাসিক বেতনে হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখার কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন। এই উদ্যোগে হাসপাতালে আগের সেই দুর্গন্ধময় পরিবেশ নেই। স্থানীয় বাসিন্দা সেলিনা বেগম তাই বললেন, হাসপাতালের আনাচে কানাচে ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকত। রোগী-স্বজন তো বটেই, আশপাশের সাধারণ মানুষেরও চলতে কষ্ট হতো। এখন আগের বাজে অবস্থা নেই, দম ফেলা যাচ্ছে।
একজন ব্যক্তির উদ্যম ও উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গার এমন বহু সমস্যার সমাধান হচ্ছে। এই উদ্যোগ তারই একটি মাত্র উদাহরণ। এ রকম আরও অসংখ্য উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান।আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে বিএনপিদলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে এলাকায় বইছে আনন্দধারা। সবাই বলছে, শরীফুজ্জামান জয়ী হয়ে আরও বদলে দেবেন চুয়াডাঙ্গাকে।
এলাকাবাসী জানান, দরদি শরীফুজ্জামান দুঃখ দেখলেই তা দূর করতে দৌড়ান। যেমন, সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা শহরের সাতগাড়ীতে চান মিয়ার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে মুহূর্তেই চান মিয়ার সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ পরিবারের সদস্যদের একমাত্র সম্বল ছিল ‘আর্তনাদ’। ‘আর্তনাদ’ শুনে ছুটে যান শরীফুজ্জামান। তিনি অর্থ ছাড়াও খাদ্য ও আসবাব দিয়ে সহায়তার পাশাপাশি ঘর মেরামতের দায়িত্বও নেন। চান মিয়া এই সহায়তা পাওয়ার পর এখন দুঃখের কথা ভুলে গেছেন। চান মিয়া বলেন, ‘আবার নতুন করে ঘর হয়েছে। সব সহায়তা তিনি করেছেন। এই তিনি শরীফুজ্জামান শরীফ।’
আরও জানা গেল, শরীফুজ্জামানের বাবা প্রয়াত মো. শামসুজ্জোহা। আলমডাঙ্গার পাঁচকমলাপুরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হাজি সামসুজ্জোহা দারুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানা। সেখানে বিনা খরচে ৫০০ ছাত্র পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু স্বীকৃতি অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানটি ভালোমতো চলছে কি না তারও খেয়াল রাখেন শরীফুজ্জামান। শরীফুজ্জামান নিজেও প্রতি বছর চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়েক শ মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীর মধ্যে বৃত্তি বিতরণ করে আসছেন। অসংখ্য মানুষের চিকিৎসা, শিক্ষা ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা দিতে ছুটেছেন ও ছুটছেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে উপকার পাওয়া শিক্ষার্থী শামীমা খাতুন বলেন, ‘এসএসসিতে ভালো ফলাফলের পরও আর্থিক সংকটে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। বিএনপি নেতা শরীফুজ্জামানের উদ্যোগে শিক্ষা বৃত্তি পেয়ে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাই। তাই শুধু নয়, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আরও খরচের জোগান তিনিই দিয়েছেন।’
উপকার পাওয়া আরও একজন আবদুল্লাহ আল মামুন জানালেন, ক্যানসারে আক্রান্ত তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ চালাতে শরীফুজ্জামান অকুণ্ঠ সহযোগিতা করেছেন। এলাকাবাসী জানান, শরীফুজ্জামান নিজের খেয়ে এভাবেই মানুষের উপকার করে বেড়ান।
মো. শামসুজ্জোহা ও সাহিদা বেগমের ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় শরীফুজ্জামান ১৯৭৩ সালের ২৫ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা শহরের মুক্তিপাড়ায় জন্ম নেন। ১৯৮৯ সালের জানুয়ারিতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হন। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক পাসের পর জেলা, পৌর ও কলেজ ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সালে যুবদলের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০০৩ সালে আলমডাঙ্গার খাদিমপুর ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেন। পরে জেলা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পান। তাঁর নেতৃত্বে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের আওতায় দলের ২০৭টি কমিটি নতুনভাবে গঠিত হয়। চুয়াডাঙ্গা পৌর ও আলমডাঙ্গা পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডসহ ২১টি ইউনিয়নের সম্মেলন আয়োজনও করেন। ২০২৪ সালের ২৩ নভেম্বর কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে তিনি বিএনপি থেকে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে প্রার্থী ছিলেন। ওই সময় তিনবার হামলার শিকার হলেও দমে যাননি। জুলাই গণ অভ্যুত্থানেও তাঁর ভূমিকা ছিল অর্থবহ। চুয়াডাঙ্গা জেলা দোকান মালিক সমিতির সদস্যসচিব সুমন পারভেজ খান বলেন, ভঙ্গুর বিএনপিকে টেনে তুলেছেন শরীফুজ্জামান।
নিজেকে রাজনীতিকের চেয়ে জনসেবক হিসেবেই দেখতে চান শরীফুজ্জামান : নিজেকে রাজনীতিকের চেয়ে জনসেবক হিসেবেই দেখতে চান শরীফুজ্জামান শরীফ। তিনি বলেন, রাজনীতি মানে ক্ষমতা নয়, মানুষের সেবা। আমি রাজনীতিকে মানুষের ভালোবাসা অর্জনের পথ হিসেবেই দেখি। মানুষের পাশে থাকার জন্যই এ ধরনের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছি। অনেক মানুষ আছেন যাঁরা কষ্টে থাকলেও সামাজিক জায়গা থেকে তা প্রকাশ করেন না, এমন মানুষদের সঙ্গেও আমার গোপন যোগাযোগ আছে। চেষ্টা করি নিজের জায়গা থেকে দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে থাকার। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, চুয়াডাঙ্গাবাসীর জীবনমান উন্নয়নে মানুষের পাশে থাকতে চাই। এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও যুবসমাজের কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখা আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। জেলায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে প্রকৃত সেবা নিশ্চিত করতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চুয়াডাঙ্গা-১ আসন বিএনপির দুর্গ। সেই দুর্গ এবার পুনরুদ্ধারের সময় এসেছে।