গত রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শেরপুরে দুই নারীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এই করোনা আক্রান্ত দুই নারীকে সরকারিভাবে আইসোলেশনে রাখা নিয়ে বিপাকে পড়ে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ। কোথায় রাখা হবে-তা নিয়ে সরকারি দলের তিন এমপির মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়।
তিন এমপিই তাদের নির্বাচনী এলাকার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই দুই নারীকে রাখতে আপত্তি জানান। এমপিদের প্রচন্ড বিরোধীতার মধ্যে রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর আসনের এমপি ও জেলা স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিক ওই দুই করোনা আক্রান্ত নারীকে জেলা সদর (২৫০ শয্যা বিশিষ্ট) হাসপাতালে রাখতে রাজি হন।
এরপর মধ্যরাতে করোনা আক্রান্ত ওই দুই নারীকে আনা হয় শেরপুর সদর হাসাপাতালে। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে রাতেই হাসপাতাল থেকে বেশ কয়েকজন সাধারণ রোগী পালিয়ে চলে যান। বহির্বিভাগে সুনশান নিরবতা। নেই ডাক্তার, সেবিকারাও হাজিরা দিয়েই খালাস। আয়া-সুইপারও আসছেন না। শুধু মাত্র অফিস কক্ষ ছাড়া সব সেবা কার্যত বন্ধ। সব মিলিয়ে শেরপুরের এই প্রধান সেবা কেন্দ্রটি এখন যেন আতঙ্কের নাম।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক হাসাপাতালের ডাক্তার ও কর্মচারিরা বলেছেন, অন্য আরও ভালো নির্জন জায়গা থাকতে রোগীর বিশাল চাপ সম্পন্ন এই হাসপাতালে কোনো ক্রমেই করোনা রোগী রাখা ঠিক হয়নি।
জানা গেছে, শেরপুর জেলায় করোনায় আক্রান্ত আইসোলেশনের জন্য ১৫০টি শয্যা প্রস্তুত আছে। যার মধ্যে ঝিনাইগাতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০, নকলার উরফা ইউনিয়নে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০, নালিতাবাড়ীর রাজনগর ইউনিয়নে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০, শ্রীবরর্দী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ ও সদরে হাসাপাতালে ১০টি।
স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, ওই দুইজন করোনা রোগীকে যেখানে রোগী এবং লোকের ভিড় নেই সেখানে (আইসোলেশন অধিভুক্ত) রাখার চিন্তা করা হয়। প্রথমে নালিতাবাড়ীর রাজনগর ইউনিয়নে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অথবা ঝিনাইগাতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেকে নির্বাচিত করা হয়। এ দুটি হাসাপাতাল ক'দিন যাবতই রোগীশূন্য ছিল। এমন প্রস্তাব আসতেই বেঁকে বসেন ওই দুই এলাকার স্থানীয় এমপিরা। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে যেন রোগীকে রাখা না হয় সেজন্য হুমকি-ধমকি দেওয়া হয় সংশ্লিষ্টদের। পরে বাধ্য হয়েই ব্যস্ততম সদর হাসপাতালে ওই রোগীদের রাখতে রাজি হন হুইপ আতিউর রহমান আতিক।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সিভিল সার্জন একেএম আনওয়ারুল রউফ চাপের ব্যাপারে কোন মন্তব্য না করে বলেন, করোনা আক্রান্তদের জেলা হাসপাতালে না রেখে রাজনগর অথবা ঝিনাইগাতিতেই রাখলে ভালো হতো। তবে চেষ্টা করেও পারা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে সদর আসনের এমপি ও জেলা স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিক বলেন, নালিতাবাড়ীর রাজনগরে ওই দুই রোগীকে রাখতে চাইলে কর্মকর্তাদের প্রচন্ড গালিগালাজ করেন ওই আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম মেম্বার। ঝিনাইগাতিতে রাখা যায়নি ওই আসনের এমপির বিরোধীতায়।
হুইপ আতিক আরোও বলেন, এখন আর কোনো অবস্থাতেই করোনা রোগীকে এই হাসপাতালে রাখা হবে না। করোনা রোগী রাখলে এই হাসপাতালের অন্যন্য রোগীর সেবা বন্ধ হয়ে যাবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল