করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আজ সোমবার থেকে সাত দিনের বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। তবে বিধিনিষেধে করোনা সংক্রমণ কমা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিধিনিষেধের আওতায় গণপরিবহন, চিকিৎসা-সৎকার ছাড়া সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে যাওয়া, হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া, শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটার মতো বিষয়গুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
তবে কোয়ারেন্টাইনের শর্ত মেনে বিদেশ যাওয়া-আসা করা, জরুরি পণ্য ও সেবাদানকারী যানবাহন, সীমিত আকারে অফিস-আদালত ও শিল্প কারখানা খোলা, হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কেনা, অনলাইন বা টেলিফোনে কেনাকাটা, পণ্য সরবরাহ, নির্দিষ্ট সময়ে উন্মুক্ত স্থানে বাজার বসা এবং সীমিত আকারে ব্যাংকিংয়ের মতো কাজ পরিচালনা করা যাবে।
এ অবস্থায় সাত দিনের এই বিধিনিষেধ সংক্রমণ কমিয়ে আনতে কাজ করবে কি না, সে বিষয় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শর্মিলা হুদা বলেছেন, ‘বাংলাদেশে লকডাউন দিয়ে সংক্রমণ কমানো সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন, লকডাউন মানে হচ্ছে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, ‘এখানে লকডাউনকে মানুষ ছুটি বা অবসর হিসেবে ধরে নিয়ে ঢাকার বাইরে যাচ্ছে।’ তিনি মনে করেন, বর্তমানে যেভাবে লকডাউন চলছে এটি দিয়ে বাংলাদেশে সংক্রমণ কমিয়ে আনার কোন সম্ভাবনা নেই।
ডা. শর্মিলা হুদা বলেন, লকডাউন দেওয়ার উদ্দেশ্যই হচ্ছে সংক্রমণ কমানো। তবে এর প্রমাণ থাকতে হবে। আর এর একমাত্র উপায় হচ্ছে সবকিছুর হার কমবে। সংক্রমণের হার কম হবে, মৃত্যুর হার কম হবে, এটা দিয়েই তো বোঝা যাবে যে সংক্রমণ কম হচ্ছে।
তিনি মনে করেন, সাত দিনের লকডাউনের মাধ্যমে আসলে সংক্রমণের হার কমিয়ে আনাটা সম্ভব নয়। এই সাত দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে হয়তো কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে যে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। তবে এই সাত দিনের লকডাউন দিয়ে কিছুই হবে না।
একই ধরনের মত দিয়েছেন পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারপার্সন ডা. ফাতেমা আশরাফও। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এরইমধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। লকডাউনের আগে মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। যার কারণে গ্রামাঞ্চলও এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এই সাত দিনের লকডাউনের মাধ্যমে কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, লকডাউনের মাধ্যমে হয়তো সামাজিক অনুষ্ঠান বা ভিড় কমানোর মতো বিষয়গুলোতে কিছুটা লাগাম টানা যেতে পারে। তবে এটি দিয়ে সংক্রমণ কমিয়ে আনা যাবে না বলে জানান তিনি।
তার মতে, সংক্রমণ কমিয়ে আনতে হলে ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তা না হলে সংক্রমণ বাড়বে এবং হাসপাতালে স্থান সংকটও দেখা দিতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, সংক্রমণ কমাতে হলে শুধু লকডাউনের মতো একটা পদ্ধতি দিয়ে কাজ হবে না। সেক্ষেত্রে সবগুলো পদ্ধতিই অনুসরণ করতে হবে।
লকডাউনের সাথে সাথে স্বাস্থ্য বিধিও মেনে চলতে হবে বলে মত দেন তিনি।
পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের পরীক্ষা করানো, কন্টাক্ট ট্রেসিং করা, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনের মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। সাথে ভ্যাকসিন দেওয়া অব্যাহত রাখতে হবে। এসব বিষয় সমন্বিতভাবে নেয়া সম্ভব হলে করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনা যাবে বলে মনে করেন তিনি।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ