রাজশাহীবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ও স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের চাহিদায় অবশেষে করোনা চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হচ্ছে সদর হাসপাতাল। এরই মধ্যে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে রাজশাহী সদর হাসপাতালকে প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বাজেটও চলে এসেছে। ফলে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা রাজশাহীর সবচেয়ে পুরোনো এই সদর হাসপাতাল।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে রবিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ১৫টি আইসিইউ বেডের সুবিধা নিয়ে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে রাজশাহী সদর হাসপাতাল চালু হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতির পর বাজেটও চলে এসেছে। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালটি চালু করতে ব্যয় ধরা হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। ১৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য থাকবে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা।
রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী আরও জানান, রামেক হাসপাতালের অধীনেই এটি পরিচালিত হবে। বর্তমানে গণপূর্তের অধীনে রাজশাহী সদর হাসপাতালের অবকাঠামো সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজ শেষ হলেই হাসপাতালটি করোনা চিকিৎসার ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
বর্তমানে করোনা সংক্রমণের চূড়ায় আছে রাজশাহী। প্রতিদিনই গড়ে প্রায় পৌনে ৫শ’ রোগী ভর্তি থাকছে রামেক হাসপাতালে। তাদের চিকিৎসা দিতে চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া করোনা রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু হওয়ায় রামেক হাসপাতালে সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরাও দুর্ভোগে পড়ছেন। এক এক করে রামেক হাসপাতালের ১৩টি ওয়ার্ড করোনা ইউনিটের সংযুক্ত করা হয়েছে। আরও একটি ওয়ার্ড সংযুক্তির কাজ চলমান আছে। এরপরে এই হাসপাতলে আর করোনা ওয়ার্ড বাড়ানো সম্ভব নয়।
এমতাবস্থায় রাজশাহী সদর হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে চালু হলে তা রোগীদের জন্য আরও অনেক সহায়ক হবে বলেও উল্লেখ করেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক।
এদিকে, গতবছর করোনার প্রথম ঢেউ শুরু হলে রাজশাহী ক্রিশ্চিয়ান মিশন হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য রাজশাহীর একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল ক্রিশ্চিয়ান মিশন হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার কথা বলে এ হাসপাতাল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
চুক্তি অনুযায়ী এই হাসপাতাল করোনা সংক্রমিতদের চিকিৎসা দিতো। খরচ বহন করতো সরকার। সেই চুক্তি অনুযায়ী ক্রিশ্চিয়ান মিশন হাসপাতালটির সঙ্গে মাসিক ১২ লাখ টাকা ভাড়ায় চুক্তি করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে, ১৯০২ সালে রাজশাহী সদর হাসপাতালের ভবনটি স্থাপন করা হয়। শুরুর পর থেকে এই হাসপাতালে সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হতো। কালের পরিক্রমায় এক পর্যায়ে ১৯৩৮ সালে সদর হাসপাতাল নামকরণ করা হয়।
নামকরণ পরবর্তী সদর হাসপাতালে মেডিসিন, নাক, কান, গলা, হাড় জোড়া ইত্যাদির পাশাপাশি অপারেশন সেবাও পরিচালিত হতো। পরবর্তীতে এখানে ডেন্টাল ইউনিট স্থাপন করে মেডিসিন, গাইনি ও হাড় জোড় চিকিৎসা সেবা শুরু করা হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৯৫৮ সালে স্থাপিত হওয়ার ফলে এই চিকিৎসাগুলো সেখানে স্থানান্তর করা হয়।
২০০৪ সালে সদর হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নাক, কান, গলা, চোখ সংক্রান্ত চিকিৎসাগুলো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুরু হয়। এতদিন পর আবারও সদর হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম