বাবারা আমাদের সারা জীবন বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে আগলে রাখেন। রোদ, প্রচণ্ড ঝড়ে আমাদের গায়ে কোনও আঁচ লাগতে দেন না। বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্কে যেমন আদর, মায়া, সম্মান আছে, তেমনই বড় হবার সাথে সাথে চলে আসে বন্ধুত্ব ও পার্টনারশিপ। তবে এই যেমন সহজ-সরল গল্পগুলো পর্দায় উঠে আসে না সহসা, থেকে যায় আড়ালেই।
এই বাবা দিবসে রবি’র বাবা দিবসের বিজ্ঞাপনটি অবশ্য সেই সহজ-সরল গল্পটাকেই তুলে এনেছে। বাবা ও ছেলের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আর এই সময়ের পরিস্থিতি সবকিছুই যেন জীবন পাতার বিভিন্ন অধ্যায়ের গল্প বলে যায়।
করোনা দূর্যোগে আমরা মেনে চলছি হোম কোয়ারেন্টাইন এবং বিশেষ প্রয়োজনে সেল্ফ আইসোলেশন। অ্যাডটিতে দেখানো হয়েছে, বাবা ছেলের সাথে গল্প কথা বলে রান্না করছেন, অনলাইনে বাজার করছেন, ওষুধ কিনে আনছেন, আকাশে ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন ছেলেকে ভিডিও কলে নিয়ে। ঘুড়িটা ছিড়ে আকাশে উড়ে যায়, মায়ের মতো, তাদের থেকে দূরে, কিংবা যখন দেখা যায় বাবা অনেকগুলো বাজার করে আনেন, মায়ের রাগী রাগী তাকিয়ে থাকা ছবিটা সামনে আসে। মায়ের অবর্তমানে একমাত্র ছেলেই বাবা’র একমাত্র পরিবার ও বন্ধু। এরপর আমরা দেখতে পাই গল্পের শুরুর অংশ যখন ছেলেটি ব্যাগ নিয়ে দূর থেকে বাসায় আসে এবং নিয়ম মেনে তাকে নিজের ঘরে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন মেনে চলতে হয়। একই বাসায় থেকেও বাবা ছেলে কথা বলেন ভিডিও কলে এবং মেনে চলেন আইসোলেশনের নিয়মগুলো। ঠিক ১৪ দিন শেষে, ছেলে বাবার কাছে এসে তাকে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা দেয়। প্রিয়জনের সুস্থতায় এই দায়িত্বটুকু পালন করার বিষয়টি বাবা ছেলের সম্পর্কের মাধ্যমে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে এই বিজ্ঞাপনে।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে, আমাদের উচিত সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। বাইর থেকে এসে নিজেকে সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন রাখা, দূর থেকে এসে নিজেকে পরিবার থেকে দূরে সেল্ফ আইসোলেশনে রাখা শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের জন্যই নয়, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্যও একান্ত প্রয়োজন। উপরন্তু আমাদের পরিবারে যারা বয়োজ্যেষ্ঠ আছেন, তাদের প্রতি দায়িত্ব আরও বেশি। বিজ্ঞাপনটির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের জীবনের সাথে অনেক বেশি মিলিয়ে দেয়। আরও একবার মনে করিয়ে দেয়, জীবনে বাবা নামক বটবৃক্ষের কী অবদান!
আমরা দেখি বাবা এখন বাসায় থাকেন, ঘরের কাজ কিংবা রান্নাতে সাহায্য করেন। বাবা ছেলেকে নিয়ে ছাদে ঘুড়ি ওড়াতে যেয়ে ফিরে যান নিজের ছোটবেলার স্মৃতিতে, এই দৃশ্য এখন দেখা যায় প্রায় প্রতিটি ছাদে। অ্যাডভারটাইজের গল্পটিতে মূল লক্ষ্য ছিল বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক সুন্দর করে তুলে ধরা। একই সাথে চলমান পরিস্থিতির সাথে কিভাবে একটি সংযোগ তৈরি করা যায় তাই ছিল গল্পকারের প্রধান ভাবনা। সম্পূর্ণ ক্রিয়েটিভ টিম এখানে একটি অসাধারণ টিম ওয়ার্ক করে গল্পটি ফুটিয়ে তোলে এবং চিত্রধারণ, লোকেশন, চরিত্রায়নে সফল একটি ভিজ্যুয়াল দর্শকদের ধরে রেখেছে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। সহজেই যে কেউ তাই নিজের জীবনকে মিলিয়ে নিতে পারেন এসব অ্যাডভারটাইজমেন্টের গল্পে। এটিই রবি এবং এডিএ টিমের সম্মিলিত সার্থকতা যে এখন এই বিজ্ঞাপনটি কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট কোম্পানি বা পণ্যের প্রচারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ফুটিয়ে তুলছে আমাদের জীবনের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দিক আর গড়ে তুলছে নানারকম সামাজিক সচেতনতা।
বিজ্ঞাপনী সংস্থা ADA-র ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর কিঙ্কর আহসান বরাবরের মতো জাদু দেখিয়েছেন গল্পে। কিঙ্কর আহসান জানান, পুরো কাজটি মানুষের মন ছুঁতে পেরেছে এই সার্থকতা আর এই কৃতিত্ব পুরো টিমের। আর গল্প থেকে পর্দায় উঠে আনতে কাজ করেছেন ডিরেক্টর তানভীর আহসান ও তার টিম।
বিডি প্রতিদিন/কালাম