ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি হলেও গাজাবাসীদের জীবনে এখনো স্বাভাবিকতা ফেরেনি। মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের ভেতর আশ্রয় খুঁজছে; নিরাপদ পানি, খাবার ও বাসস্থানের তীব্র সংকটে দিন কাটাচ্ছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের দাতব্য প্রতিষ্ঠান মাস্তুল ফাউন্ডেশন গাজার ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পাশে থেকে নিয়মিত মানবিক সহায়তা চালিয়ে যাচ্ছে।
২০২৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি গাজায় বিভিন্ন ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতি রমজান ও কোরবানির সময় বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে ইফতার, কোরবানির গোশত ও ফুড প্যাক বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি, প্রাথমিক চিকিৎসা ও জরুরি ওষুধ সরবরাহের মাধ্যমে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখছে এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি। মাস্তুল ফাউন্ডেশন শুধুমাত্র খাদ্য বিতরণেই সীমাবদ্ধ নয়। ফিলিস্তিন দূতাবাসের সহযোগিতায় বাংলাদেশে অবস্থানরত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের ‘স্ট্যান্ড উইথ প্যালেসটিন’ শীর্ষক একটি অনুপ্রেরণামূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
মাস্তুল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কাজী রিয়াজ রহমানসহ পুরো দল এই কঠিন পরিস্থিতিতে সাহসিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গাজার প্রতিটি কান্না আমাদের হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হয়। আমরা চাই না কোনো শিশু বা তরুণীকে এভাবে কষ্ট পেতে হোক। বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থনে আমরা গাজার যুদ্ধ-আক্রান্তদের কাছে প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছি, যা ধ্বংসস্তূপের মাঝে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখছে।
তিনি আরও বলেন, মানবতার এই যুদ্ধে প্রতিটি সহায়তা, প্রতিটি দান, প্রতিটি সৎ প্রচেষ্টা গড়ে তুলবে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ এবং ফিরিয়ে দেবে ফিলিস্তিনি গাজার মানুষের মুখে হাসি।
মাস্তুল ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দান, জাকাত, ফিতরা ও সাদাকা থেকে সংগৃহীত অর্থ ফিলিস্তিনি গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এছাড়াও ভবিষ্যতে তারা ফিলিস্তিনের পাশে থাকবে। আর্থিক সহায়তা ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি গাজায় পুনর্বাসন প্রকল্প, হাসপাতাল, মাদ্রাসা ও এতিমখানা স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
মাস্তুল ফাউন্ডেশন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত একটি স্বনামধন্য ও সেবামূলক জাতীয় প্রতিষ্ঠান। কাজী রিয়াজ বলেন, বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মাস্তুল ফাউন্ডেশন দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। আমাদের মানবিক কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: করোনা মহামারির সময় দাফন সেবা প্রদান; ২০২২ ও ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জরুরি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ; এবং ২০২৩ সালের তুরস্কের ভূমিকম্পে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা প্রদান।
মাস্তুল ফাউন্ডেশনের অন্যতম সফল প্রকল্প ‘জাকাত স্বাবলম্বী’ এর মাধ্যমে অসংখ্য অসহায় ব্যক্তি ও যুব সমাজের জন্য স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, যা তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলছে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিন বিনামূল্যে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিতদের একবেলার খাবার পৌঁছে দিচ্ছে. এছাড়াও, ঢাকার হাজারীবাগ বারইখালি এলাকায় নিজস্ব মাদ্রাসা, সেল্টারহোম, এতিমখানা ও মেহমানখানা রয়েছে।
মাস্তুল ফাউন্ডেশন অসহায় এতিম শিশু ও অভিভাবকহীন প্রবীণদের জন্য গড়ে তুলছে মাস্তুল ইসলামিক শেল্টারহোম, একটি ১০ তলা মানবিক আশ্রয়কেন্দ্র। এখানে থাকবে আধুনিক শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা, নিরাপদ আবাসন ও যত্নশীল সেবা। একই ছাদের নিচে এতিম ও বৃদ্ধরা পাবেন পরিবারের মতো ভালোবাসা ও নিরাপত্তা। প্রকল্পটিতে থাকবে মসজিদ, স্কুল, লাইব্রেরি, হাসপাতাল ও দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র—যা হবে একটি চলমান সদকায়ে জারিয়া উদ্যোগ এবং মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আইন অনুযায়ী, মাস্তুল ফাউন্ডেশনকে প্রদত্ত যেকোনো দান, জাকাত বা সদকা আয়করমুক্ত, যা দাতাদের জন্য আয়কর রেয়াত হিসেবে গণ্য হবে।
বিডি-প্রতিদিন/শআ