সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা
৯ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

পানিবন্দী মানুষের মানবেতর জীবন, মিলছে না ত্রাণ

পানিবন্দী মানুষের মানবেতর জীবন, মিলছে না ত্রাণ

বন্যা : দেশের বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে অসংখ্য মানুষ। বগুড়ার সারিয়াকান্দির এই পরিবারটি চৌকি ও মালামাল নিয়ে গতকাল বাড়ি ছাড়ে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবং পাহাড়ি ঢলে জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা, নওগাঁ, ফেনী ও শেরপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে এসব জেলায় নতুন নতুন এলাকা। ভেসে যাচ্ছে মাছের খামার। নষ্ট হচ্ছে খেতের ফসল। দিনের পর দিন পানিবন্দী থাকা লাখ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নেই তাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের খবর-

জামালপুর : যমুনার পানি বেড়ে গতকাল বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল। ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ২৫ গ্রামের ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বাড়িঘরে পানি উঠায় অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু স্থানে। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা আমন। বগুড়া : ধুনট ও সারিয়াকান্দির পয়েন্টে যমুনার পানি গতকাল বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ দুই উপজেলার ছয় হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে বহু পরিবার। ৪৮টি স্কুলে পানি প্রবেশ করায় সাময়িক ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ : জেলার চার উপজেলার ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির ও হাটবাজার। হাজার হাজার একর আবাদি জমি ডুবে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। সংকট দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের। অনেক এলাকায় পৌঁছায়নি কোনো ত্রাণ সহয়তা। কুড়িগ্রাম : ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। সড়ক ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। অনেকে গবাদি পশু নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। রংপুর : গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার পর মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকার এক লাখ মানুষ নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গুপ্তপাড়া, নুরপুর, বৈরাগীপাড়াসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ৩০ হাজার মানুষ স্থানীয় বিদ্যালয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রংপুর সেনানিবাস সংলগ্ন সড়ক পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শেরপুর : শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার ৬০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নালিতাবাড়ীর ১০ গ্রামের আমন চারা এখন পানির নিচে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, বাজার, মৎস্য খামার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে অবস্থান নিচ্ছেন। প্রশাসনের কেউ তাদের খোঁজ নেয়নি বলে অভিযোগ দুর্গতদের। গাইবান্ধা : চার উপজেলার ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দী। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট ও করতোয়ার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে ফুলছড়ির সিংড়িয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। নওগাঁ : আত্রাই উপজেলার ফুলবাড়ী ও ভর তেঁতুলিয়ায় গতকাল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পাঁচ গ্রামসহ আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শত শত একর জমির ধান পানির নিচে। এসব এলাকার ৫০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী। দুর্বিষহ দিন কাটছে তাদের। ফেনী : মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ১০টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ২৮ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে শত শত পুকুর ও মাছের ঘের। নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল। পানিবন্দী মানুষ পড়েছেন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে। ভুক্তভোগী অধিকাংশের দাবি, চার দিনেও তারা কোনো ত্রাণ সামগ্রী পাননি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর