রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

হুমকির মুখে দুগ্ধশিল্প

করোনাভাইরাসের প্রভাব

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

হুমকির মুখে দুগ্ধশিল্প

শাহজাদপুরে গরুর ননফ্যাট দুধ পাঁচ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে

করোনাভাইরাসের প্রভাবে হুমকির মুখে পড়েছে সিরাজগঞ্জের দুগ্ধশিল্প। দেশের বিভিন্ন দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সিরাজগঞ্জের খামারিরা উৎপাদিত দুধ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। এ ছাড়াও মিষ্টির দোকান ও চা স্টল বন্ধ এবং হাটবাজারে লোকসমাগম কমে যাওয়ায় খোলাবাজারেও খুচরা দুধের চাহিদা কমে গেছে। বাধ্য হয়ে খামারিরা খোলাবাজারে নামমাত্র মূল্যে দুধ বিক্রি করছেন।

জানা যায়, আশির দশকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া এবং পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ দুগ্ধ অঞ্চল গড়ে ওঠে। এ অঞ্চলকে ঘিরেই বাঘাবাড়ীতে গড়ে ওঠে মিল্কভিটা। এরপর বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠে আড়ং, প্রাণ  ডেইরি, ফার্ম ফ্রেশ, অ্যামো মিল্ক, আফতাব, রংপুর ডেইরি, ব্র্যাকসহ প্রায় ২০টি দেশীয় তরল দুধ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান। এসব কারখানায় প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার দুধ কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করার পর প্রক্রিয়াজাত করে সারা দেশে বাজারজাত করে থাকে। করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় কৃষকরা দুধ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। এমনকি ছানা ও মিষ্টিজাত কারখানা এবং চায়ের  দোকান বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব জায়গায় খামারিরা তাদের দুধ সরবরাহ করতে না পারায় খামারিরা চরম ক্ষতির মধ্যে পড়ছে।

শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, শুধু শাহজাদপুর উপজেলায় তিন হাজার ৮০০ রেজিস্টার্ড ও চার হাজার ১০০ নন-রেজিস্টার্ড খামার রয়েছে। এর বাইরে এ উপজেলায় আরও প্রায় দেড় হাজার কৃষক গরু লালন-পালনসহ দুগ্ধ উৎপাদন করে। সবাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুধ সরবরাহ করত। করোনাভাইরাসের কারণে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় খামারিরা বিপাকে পড়েছে।

শাহজাদপুরের খামারি জাহাঙ্গীর হোসেন, আলমগীর হোসেন ও আবদুল হালিম বলেন, দুধ বিক্রি করতে না পেরে তারা খামারের উৎপাদিত দুধ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠাচ্ছেন। কিছু দুধ বিক্রি করতে পারলেও দাম পেয়েছেন মাত্র ১০ টাকা লিটার। আবার অনেকে ৫ টাকা লিটারও বিক্রি করছেন।

মিল্কভিটার আওতাধীন শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি ওয়াজ আলী বলেন, মিল্কভিটা বন্ধ থাকায় তাদের সমিতিভুক্ত খামারিরা দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পানির দরে ফেরি করে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। নন ভ্যাট দুধ বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা লিটার। এতে খামারিরা চরম লোকসানের মুখে পড়ছেন। এ অবস্থায় দুগ্ধশিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারকে বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এই খামারি।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী মিল্কভিটা কারখানার ডিজিএম ইদ্রিস আলী জানান, সরকারি নির্দেশে মিল্কভিটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে খামারিদের অসুবিধা হলে আমাদের কিছু করার নেই। তিনি আরও জানান, ৯০০ টন উৎপাদিত গুঁড়াদুধ অবিক্রীত অবস্থায় মিল্কভিটার গুদামে মজুদ রয়েছে। যে কারণে নতুন করে দুধ উৎপাদন করাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কারখানার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর