শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় করুণ দশা তাঁতশিল্পের

লোকসান গুনছেন মালিকরা ।। বেকার শত শত শ্রমিক

কাবুল উদ্দিন খান, মানিকগঞ্জ

করোনায় করুণ দশা তাঁতশিল্পের

মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে মানিকগঞ্জের শত বছরের ঐতিহ্য তাঁতশিল্পে করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। বন্ধ হয়ে গেছে শত শত তাঁতকল। বেকার হয়ে পড়েছেন বহু মালিক-শ্রমিকরা। মানিকগঞ্জের সাঁটুরিয়া উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর কোল ঘেঁষা দুটি ইউনিয়ন ইউনিয়ন বরাইদ ও দিঘুলিয়ায় গড়ে উঠে তাঁত কারখানা। এক সময় এখানকার তাতের লুঙ্গি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। কালের বিবর্তনে অটোমেশিনে লুঙ্গি প্রস্তুত শুরু হলে তাদের সঙ্গে পেরে উঠতে পারছিলেন না এখানকার তাঁতিরা। কয়েক বছর লোকসান গুনে এখানকার তাঁতিরা নতুন করে শাড়ি কাপর তৈরিতে মনোনিবেশ করেন। অল্পদিনের মধ্যে তাদের ভাগ্য ঘুরে যায়। আবার সবার মুখে হাসি ফিরে। সংসারে আসে সুদিন। স্থানীয় শত শত পরিবার তাঁত শিল্পে বিনিয়োগ শুরু করেন। এরই মধ্যে করোনার আঘাত আসে এ শিল্পে। স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তাঁত সংশ্লিষ্টদের। কভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাবে বন্ধ আবর বন্ধ হয়ে গেছে শত শত তাঁতকল। সরেজমিন দেখা যায়, তাঁতপল্লী জুড়ে সুনসান নীরবতা। ঠকঠক শব্দ নেই। নেই কারও কাজের ব্যস্ততা। সাভার গ্রামের তাঁতি আরশেদ আলী (৫০) বলেন, পূর্ব পুরুষের ব্যবসা করে ভালোই ছিলাম। করোনায় সব শেষ হয়ে গেল। করোনার কারণে তাঁত বন্ধ, সেই সঙ্গে বন্ধ আয় রোজগার। এখানে এন্ডিশিল্ক ও হাফশিল্ক এ দুই ধরনের শাড়ি তৈরি হয়ে থাকে। প্রায় ৬০০ পরিবার এই পেশায় জড়িত। তাঁতশিল্প ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছিল হাজার হাজার লোকের। নতুন বোয়া গ্রামের মল্লিক ব্রাদার্স অ্যান্ড সন্স’র মালিক আরিফ হোসেন (৩৫) বলেন, আমার দাদা তাঁতের কাজ করতেন। তার পর আমার বাবা এখন আমি এ ব্যবসা দেখাশোনা করছি। কঠোর লকডাউনে দেশের সব দোকানপাট বন্ধ। এ ছাড়া বিভিন্ন উৎসব আমাদের কাপড়ের চাহিদা বাড়ে। কিন্তু করোনার কারণে অনুষ্ঠানও বন্ধ। লাখ লাখ টাকার সুতা ও তৈরি করা কাপর নষ্ট হচ্ছে। আরিফের বাবা ইছাক আলী বলেন, আমার ঘরে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার শাড়ি কাপড় অবিক্রীত রয়েছে। অথচ মহাজনরা সুতার টাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। আমার মতো এমন অবস্থা এই এলাকার বহু তাঁত ব্যবসায়ীর। কোটি কোটি টাকার কাপড় আটকা পড়ে আছে। দ্রুত এগুলো বিক্রি করতে না পারলে নষ্ট হয়ে যাবে। এ ছাড়া সুতাসহ অন্য কাঁচামালও নষ্ট হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই এলাকার তাঁতশিল্প একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে। সরকার সহজশর্তে ঋণ না দিলে আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না। স্থানীয় বরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, করোনার কারণে এখানকার তাঁতশিল্প বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা কঠিন সময় পার করছেন। সাঁটুরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদ ফটো বলেন, শত বছরের ঐতিহ্য এখানকার তাঁতশিল্প করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে। তাদের সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যারা টাকার অভাবে তাঁতশিল্প চালু করতে পারবেন না, তাদের সহজশর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।  

সর্বশেষ খবর