মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক সেচ সংকটে চাষিরা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক সেচ সংকটে চাষিরা

পঞ্চগড়ে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক পড়েছে। গত কয়েক মাসে রাতের অন্ধকারে এই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। জানা গেছে, এসব ট্রান্সফরমার নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি লি., পল্লীবিদ্যুৎ এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। এসব ট্রান্সফরমার রাতের অন্ধকারে চুরি করা হয়। জানা গেছে, অনেক ট্রান্সফরমারের ওপরের অংশ ভেঙে ভিতরের তামার তৈরি কয়েলের অংশটি নিয়ে যায় চোরেরা। বাইরের অংশটি আশপাশের খোলা জায়গায় রেখে যায় তারা। তামার তারের কয়েলটি চড়া দামে চোরাই বাজারে বিক্রি করা হয়। সংঘবদ্ধ একটি চক্র ট্রান্সফরমার চুরির সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসে তাদের নিয়ন্ত্রিত ১৫টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। চাষাবাদে সেচের জন্য এসব ট্রান্সফরমার কৃষকদের জমিতে স্থাপন করা হয়েছিল। এসব ট্রান্সফরমার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে গভীর নলকূপ এবং সেচ পাম্পের মাধ্যমে বিভিন্ন আবাদে সেচ দেওয়া হতো। বোদা উপজেলা থেকে ৮টি এবং দেবীগঞ্জ থেকে ৭টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এ দুই উপজেলার এসব এলাকায় বাদাম, ভুট্টা, বোরো, গমসহ নানা ধরনের কৃষি কাজে সেচ ব্যবহার করা হয়। এ ১৫টি ট্রান্সফরমারের দাম ৬ লাখ টাকা। কৃষকদের প্রতি ট্রান্সফরমার বাবদ ৪৫ হাজার টাকা বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে প্রদান করতে হয়।

 ট্রান্সফরমার চুরি যাওয়ায় সেচ নিয়ে আশঙ্কায় আছেন চাষিরা। দেবীগঞ্জ উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসনাত জামান চৌধুরী জর্জ জানান, আমার বাগান এবং পাশের দুটি গ্রাম থেকে গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এক দিনে তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এ এলাকার চাষিরাই নিজেদের টাকা দিয়ে এসব ট্রান্সফরমার কিনেছিল। এখন আবার তাদের টাকা দিতে হবে। দরিদ্র কৃষকরা সংকটে পড়েছে। পঞ্চগড় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম জানান, রাতের অন্ধকারে এসব ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে। চাষিরা বিপদে পড়েছেন। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। এদিকে নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি লিমিটেডের ২৫০ ওয়াটের একটি, ১০০ ওয়াটের একটি এবং ৭৫ ওয়াটের একটিসহ মোট তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি গেছে। এগুলোর মূল্য প্রায় ১২ লাখ টাকা। গত দুই মাসের মধ্যে এসব ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এগুলোর মধ্যে তেঁতুলিয়া উপজেলায় ২টি এবং সদর উপজেলায় ১টি। উপসহকারী প্রকৌশলী মনজুর মোর্শেদ জানান, রাতের অন্ধকারে বিদ্যুৎ বন্ধ করে এসব ট্রান্সফরমার চুরি করা হয়। আমরা মামলা করেছি। অন্যদিকে গত বছর পঞ্চগড় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি পরিচালিত দুটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে বিভিন্ন থানায় মামলা এবং লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে। বোদা থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, একটি অভিযোগ পেয়েছি। ধারণা করা হচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র এ চুরির সঙ্গে জড়িত। তাদের আটক করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। তেঁতুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সায়েম মিঞা জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে।

সর্বশেষ খবর