শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

চলনবিলে বিলুপ্তির পথে গোলাঘর

নাটোর প্রতিনিধি

চলনবিলে বিলুপ্তির পথে গোলাঘর

চলনবিল অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে এক সময় সম্ভ্রান্ত কৃষকের উঠানে উঠানে শোভা পেত ধান রাখার গোলাঘর। এখন সেটা বিলুপ্তির পথে। গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু আবহমান বাংলার কাব্যিক চরণ। যা বর্তমানে প্রবাদবচন। পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এখনো কেউ কেউ বাড়ির উঠানে এ গোলাঘর রেখে দিয়েছেন। চলনবিলের গ্রাম-গঞ্জের অবস্থাসম্পন্ন কৃষক তাদের উৎপাদিত ধানসহ অন্যান্য ফসল সংরক্ষণের জন্য বাড়ির উঠানের এক কোনে একটু উঁচু জায়গায় গোলাঘর স্থাপন করতেন। যাদের জমির পরিমাণ একটু বেশি তারা ধানসহ অন্যান্য ফসল সংরক্ষণের জন্য এ গোলাঘর ব্যবহার করতেন। বাঁশ দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি গোল আকৃতির কাঠামোই গোলা। গোলাকৃতির কাঠামোতে এঁটেল মাটির মন্ড তৈরি করে ভিতরে সে মাটির প্রলেপ লাগিয়ে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে তার ওপরে পিরামিড আকৃতির টিনের চালা দিয়ে বিশেষ উপায়ে তৈরি করা হতো এ গোলাঘর। ছোট-বড় মানভেদে এসব গোলায় ১০০ থেকে ৩০০ মণ ফসল সংরক্ষণ করে রাখতেন। চলনবিলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল প্রথমে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে গোলায় সংরক্ষণ করতেন। এ গোলাঘর টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতার দাবি কৃষি-সচেতন মহলের। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের রাবারড্রাম এলাকার কৃষক মো. হাসান আলী বলেন, এক সময় মাঠভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, আর গোলাভরা ধান গ্রামের সম্ভ্রান্ত গৃহস্থ্যের পরিচয় বহন করত। সভ্যতার বিবর্তন আর আধুনিক কৃষি সংরক্ষণ পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে হারাতে বসেছে গৃহস্থ্যের ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা। আমরা পূর্বপুরুষদের ব্যবহৃত সেই ধানের গোলাঘরটি এখনো স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রেখে দিয়েছি। আবদুলপুর সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হাসেম আলী জানান, সত্তর-আশির দশকের দিকে এসব ধানের গোলাঘর কৃষক ও সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিল।

করণ এ গোলাঘর কৃষি ফসল সংরক্ষণে টেকসই হওয়ায় সাধারণ মানুষ এটাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন।

আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে গোলাঘরটি স্মৃতি হিসেবে এখনো টিকিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে মানুষের পারিবারিক ব্যবহার্য উপকরণে। ফলে প্রযুক্তির দৌড়ে টিকতে না পেরে গোলাঘর এখন বিলুপ্তির পথে। তবে দেশের বিলুপ্ত প্রায় গোলাঘর টিকিয়ে রাখতে কৃষি বিভাগের এগিয়ে আসা দরকার। গুরুদাসপুর পৌর সদরের আনন্দ নগর গ্রামের কৃষক মো. আহাদ আলী বলেন, আশি-নব্বই দশকের দিকে একটা গোলা তৈরিতে খরচ হতো ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। গোলা নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল। এখন এ পেশাটিও হরিয়ে গেছে। এখন চট বা পলিথিনের বস্তায় ভরে কখনো প্লাস্টিকের ড্রামে ভরে ফসলাদি সংরক্ষণ করা হয়। গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনর রশীদ বলেন, বর্তমান সময়ে কৃষকদের আবাদি ও বসবাসের জমির পরিমাণ অনেক কমে গেছে। তাছাড়া গোলা তৈরিতে জায়গা বেশি লাগে, গোলাকে বায়ুরোধী রাখতে না পারা, গোলা নির্মাণ ও সংরক্ষণ খরচ বেশি, পোকা ও রোগের আক্রমণের সম্ভবনা থাকার কারণে ধানের গোলা এখন গুদামঘরে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সময়ের কাছে ঐতিহ্য হারাতে বসা কৃষকের গোলার স্থান দখলে নিয়েছে আধুনিক গুদামঘর। সেখানে কৃষকের উৎপাদিত শত শত মণ ফসল সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে। এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে বাঁশের চাটাইয়ে তৈরি ডোল বা গোলাঘর।

 

সর্বশেষ খবর