নাগরিক সমাজের সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবনা সভায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে একটি রিপাবলিক তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। জুলাই আন্দোলনে শহীদ এবং আহতদের প্রতি দায় থেকে নতুন রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করা আমাদের লক্ষ্য। তবে, শুধু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নির্মাণ করা যাবে না। মৌলিক বিষয়ে ঐক্য না হলে গণতান্ত্রিক ধারা সচল হবে না।
গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নাগরিক কোয়ালিশন আয়োজিত সভায় তারা এসব কথা বলেন। সংবিধান সংশোধনে নাগরিক সমাজের সাত দফা প্রস্তাব শীর্ষক সভায় বক্তব্য রাখেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাঈল জবিউল্লাহ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির আহ্বায়ক মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী আইরিন খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা প্রমুখ। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবেই স্বৈরতন্ত্র কায়েম করা গেছে। বিচার বিভাগ স্বাধীন না করে নির্বাহী বিভাগের একচ্ছত্র ক্ষমতা রেখে গণতন্ত্র সম্ভব নয়। বাংলাদেশে একটি রিপাবলিক তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে শহীদ এবং আহতদের প্রতি দায় থেকে নতুন রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করা। তবে শুধু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নির্মাণ করা যাবে না।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ এবং দলটির কার্যক্রমের ওপর অন্তর্বর্তী সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র মানে না, তাদের ডিএনএতে গণতন্ত্রের কোনো অস্তিত্ব নেই। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের আওতায় আনতে আইন সংশোধন এবং তাদের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞাকে বিএনপি সাধুবাদ জানায়। রাজনৈতিক দল হিসেবে মাফিয়া আওয়ামী লীগের দেশ-বিদেশে কোথাও স্বীকৃতি নেই বলেও দাবি করেন তিনি। নাহিদ ইসলাম বলেন, ক্ষমতার ভারসাম্য ও বিকেন্দ্রীকরণের মতো মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি না হলে অন্যান্য বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি করে গণতান্ত্রিক ধারা সচল হবে না। এক ব্যক্তির ইচ্ছামাফিক সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এত বড় গণ অভ্যুত্থানের পরও সংবিধান সংশোধনের মৌলিক বিষয়ে আমরা একমত হতে পারছি না, এটি দুঃখজনক। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছেন। কিন্তু সেটাও পরিবর্তন হয়েছে। বিএনপি কি সেটা বুঝে না। সুতারাং নতুন সংবিধান তৈরি করতে হবে। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিগত সময়ে সংবিধান ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু এই সংশোধনে স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি হয়েছে। এজন্যই সংবিধানের পরিবর্তন না করি তাহলে মৌলিক সংস্কার করতে হবে। আমরা পরিবর্তনের মাধ্যমে ঐকমত্য সৃষ্টির চেষ্টা করছি। স্বৈরাচার যাতে ফিরে আসতে না পারে, সে অনুযায়ী আইন ও ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। সেলিম উদ্দিন বলেন, সংবিধান সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার প্রয়োজন। নেতা-কর্মীদের মধ্যে চিন্তা চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কার দরকার। একই সঙ্গে দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র অনুশীলন করা দরকার। দলগুলো একে অপরের প্রতি যেরকম অসম্মান দেখায়, এ ধরনের রাজনৈতিক দল কীভাবে জনকল্যাণের জন্য কাজ করবে।