শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ফরিদপুরে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য

হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

ফরিদপুরে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য

ফরিদপুরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের জেলা হিসেবে ফরিদপুরকে স্বাস্থ্যনগর ধরা হলেও এখানকার চিকিৎসাব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। স্বাস্থ্য বিভাগের যথাযথ নজরদারি না থাকা এবং এ দফতরের কিছু কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর বেহাল দশা। জানা যায়, এ জেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রহস্যজনক কারণে এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকে অভিযান না চালানোয় একের পর এক ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। বিভিন্ন সময় ফরিদপুরের কয়েকটি হাসপাতালে রোগীর ভুল চিকিৎসার অভিযোগ থাকলেও নানাভাবে তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না রেখে আয়া-নার্স দিয়ে অপারেশন করানোর প্রমাণ মিলেছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এরই মধ্যে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে দুটি প্রাইভেট হাসপাতাল ও দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে মনিরা নামে এক রোগীর অপারেশন হয় ২০২০ সালে। তখন চিকিৎসকের ভুলে মনিরার পেটে কাঁচি রেখে সেলাই করা হয়। প্রায় দুই বছর পর ১০ ডিসেম্বর অপারেশনের মাধ্যমে মনিরার পেট থেকে বের করা হয় সেই কাঁচি। এ নিয়ে সমালোচনার রেশ না কাটতেই ১৫ জানুয়ারি শহরের পশ্চিম খাবাসপুরে আল মদিনা নামে একটি হাসপাতালে আয়া দিয়ে সিজার করতে গিয়ে নবজাতকের কপাল কেটে ফেলা হয়। শিশুটির কপালে ৯টি সেলাই করেন সেই আয়া। জানাজানি হলে সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পান। বন্ধ করে দেওয়া হয় আল মদিনা হাসপাতাল। মামলা হয় পরিচালকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। হাসপাতালের পরিচালক, আয়াসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ। তারা জেলহাজতে রয়েছেন। এ ঘটনার পর শহরের আরামবাগে আরও একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নবজাতকের হাত ভেঙে ফেলার অভিযোগ ওঠে। ১৯ জানুয়ারি এ হাসপাতালটিও বন্ধ করে দেন সিভিল সার্জন। সদর ছাড়াও ভাঙ্গার একাধিক ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা, চরভদ্রাসন উপজেলার বেশির ভাগ ক্লিনিকের বিরুদ্ধেও আছে একই অভিযোগ। তা ছাড়া ফরিদপুর জেলায় ছোট-বড় ২ শতাধিক প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক থাকলেও এর বেশির ভাগের নেই বৈধতা। এসব ক্লিনিক-হাসপাতালে নেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও চিকিৎসক। ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক পান্না বালা বলেন, ‘জেলাজুড়ে যেসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে তার বেশির ভাগেরই বৈধতা নেই। সব হাসপাতাল-ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম লিখে রাখা হয়। যাতে রোগী প্রলুব্ধ হন। অথচ আয়া ও নার্স দিয়েই পরিচালিত হয় বেশির ভাগ হাসপাতাল। এগুলো বন্ধ করতে হবে।’ নারীনেত্রী শিপ্রা গোস্বামী বলেন, ‘হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসাসেবা নেই বললেই চলে। সেখানে বিভিন্ন সাইনবোর্ডে দেখা যায় অনেক চিকিৎসকের নাম। প্রায় প্রতিটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার একই চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে।’ সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, ‘যেসব প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বৈধ কাগজপত্র নেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর