বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বটতলায় পাঠদান

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

বটতলায় পাঠদান

প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে নিয়ে বটগাছের নিচে খোলা আকাশে পাঠদান করছেন। তাঁকে সহযোগিতা করছেন সহকারী শিক্ষক শহীদুল ইসলাম। তবে বটগাছের চারদিক সুন্দর করে ইট, সিমেন্ট, বালু দিয়ে বাঁধানো ও পলেস্তারা করা। দিনের পর্যাপ্ত আলো, বাতাস ও মনোরম পরিবেশে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছে। তবে বর্ষাকালে তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ২৭ নম্বর গাংরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোলা আকাশের নিচে বটগাছের তলায় এ পাঠদান চলছে। বিদ্যালয়ের বয়স শত বছর পেরিয়ে গেলেও আজও শ্রেণিকক্ষের সংকট দূর হয়নি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট করে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। বারবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের আশার বাণী শোনানোর পরও সমস্যার সমাধান হয়নি। জানা গেছে, উপজেলার উমার ইউনিয়নের গাংরা গ্রামে ১৯২০ সালে গাংরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। এটি উপজেলার অন্যতম প্রাচীন প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়ে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরের তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এর একটি কক্ষ অফিস এবং অন্য দুটি ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দুই শিফটে পাঠদান চলে। প্রথম শিফটে প্রাক্-প্রাথমিক, প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণি।

এ ছাড়া পঞ্চম শ্রেণিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রথম শিফট থেকে পাঠদান করা হয়। শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন চারটি। আছে মাত্র দুটি। প্রয়োজনের তাগিদে সিঁড়িঘরটিকে সংস্কার করে শিক্ষকরা ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহার করছেন। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে একটি শ্রেণিকে সব সময় বারান্দায় অথবা বটগাছ না হয় আমগাছের নিচে ক্লাস নিতে হয়। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে ১৪১ শিক্ষার্থী এবং প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। পঞ্চম শ্রেণির প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী জোনাইদ জানায়, তাদের অনেক কষ্ট করে ক্লাস করতে হচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করায় বর্ষাকালে পানিতে শরীর ও বই-খাতা ভিজে যায়। অনেক সময় পানিতে ভেজার কারণে জ্বর-সর্দি ও অন্যান্য রোগ হয়।

একই ক্লাসের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন জানায়, রোদ ও গরমের কারণে বাইরে ক্লাস করা খুবই কষ্টের। তার পরও ক্লাস করতে হয়। একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে এ সমস্যা থাকত না। অন্য শিক্ষার্থী রমজান আলী আক্ষেপের সুরে বলেয়, ‘অনেক বড় বড় স্যার বিদ্যালয়ে এসে বলেন নতুন ভবন নির্মাণ হবে। বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন হয়নি। আর তিন মাস পর এ বিদ্যালয় থেকে আমাদের শিক্ষাজীবন শেষ হবে।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পুরনো ভবন ভেঙে ফেলার পর থেকে শ্রেণি সংকট চলছে। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি এবং বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ছবিসহ বিভিন্ন তথ্য পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে যে ভবনে ক্লাস নেওয়া হয় বর্ষাকালে সেটির ছাদ দিয়ে পানি চুইয়ে পড়ে। তবে সংস্কার করে ব্যবহারযোগ্য করা হয়েছে। এক্ষুনি একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে শ্রেণি সংকট থাকবে না।’ উপজেলা প্রকৌশলী মো. আলী হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। একটি কার্যবিবরণী তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর