উত্তরের শিল্প ও বাণিজ্য প্রধান শহর সৈয়দপুরে বিদেশি বিনিয়োগে বিশ্বমানের ফাইভ স্টার হোটেল ও শপিং মল শেখ সাদ কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এটি শহরের সৈয়দপুর-ঢাকা মহাসড়কের বাঙ্গালীপুরের ১৫০ শতক জমির ওপর নির্মিত হবে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরের বহুদেশীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করবে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ৮০০ কোটি টাকা দেশি ব্যাংক সরবরাহ করবে। এটি নির্মিত হলে ঢাকার বাইরে হবে দেশের তৃতীয় ফাইভ স্টার হোটেল। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিদেশি বিনিয়োগে সম্পূর্ণ বেসরকারি খাতের ফাইভ স্টার মানের রয়েল বেঙ্গল হোটেলটি হবে ১২ তলা বিশিষ্ট। এর দুই তলা আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোরে ৫০০ গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা রাখা হয়েছে। প্রতিটি ফ্লোর হবে ১ লাখ বর্গফুট আয়তনের। সর্বাধুনিক এ ভবনের নকশা করেছেন দুবাই, সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের নামকরা আর্কিটেকচার গ্রুপ। পাঁচ তারকা এ হোটেলে থাকবে আমেরিকার বিখ্যাত ম্যাকডোনাল্ড ফুড শপ, কনভেনশন সেন্টার, কিডস জোন, ফুডকোট, সিনেপ্লেক্স, জিম ও স্পা সেন্টার। ছয় তলার শপিং মলে ৬০০ দোকানে থাকবে নামকরা দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের খাদ্যপণ্য। অবশিষ্ট চার তলায় থাকবে আন্তর্জাতিক মানের ১৫০টি শয়নকক্ষ। রাষ্ট্রীয় অতিথিদের জন্য থাকবে একাধিক প্রেসিডেন্ট স্যুট। এ ছাড়াও হোটেলের ছাদে হেলিপ্যাড এবং টেলিস্কোপে চোখ রেখে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিমালয় দেখার একটি হিমালয় ভিউ স্যুটের সুবিধা থাকবে। হোটেলটি চালু হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। এ প্রকল্পের দেশি উদ্যোক্তা ও শেখ সাদ কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মো. আলীম মিন্টু জানান, সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকমানের আঞ্চলিক হাব হতে যাচ্ছে। এ বিমানবন্দর হয়ে এ অঞ্চলে ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের পর্যটক, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীর আগমন বৃদ্ধি পাবে। সৈয়দপুরের উপকণ্ঠে রয়েছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল উত্তরা ইপিজেড। এর প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরে পঞ্চগড়ে রয়েছে মানসম্মত চা বাগান, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর।
এ ছাড়াও মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে আছে হিলি স্থলবন্দর। সৈয়দপুর হয়ে সপ্তাহে দুই দিন যাতায়াত করছে ঢাকা ও ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন। যার শেষ স্টপেজ দেওয়া হয়েছে চিলাহাটী রেল স্টেশন। এ রেল স্টেশন থেকে ভারতে যাতায়াত করা যাবে। এ ছাড়া সৈয়দপুরে রয়েছে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে যাতায়াতের সুবিধা। এসব কারণে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও বিনিয়োগকারীদের থাকার জন্য দেশের তৃতীয় ফাইভ স্টার হোটেল সৈয়দপুরেই গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রকল্পের উদ্যোক্তা শেখ আলীম মিন্টু বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করে বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের এ প্রকল্প ২০২৩ সালে চালু করার লক্ষ্য ছিল। এ জন্য ২০১৭ সালে জমি ক্রয় করে ভূমি উন্নয়নসহ ভবন নির্মাণের সাইড অফিস চালু করা হয়। ভবন নির্মাণের জন্য সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে। এ অবস্থায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমার দলিলপত্র যাচাই না করে জমির অংশবিশেষ রেলের দাবি করে আদালতে মামলা দিয়েছে। অথচ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি না করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সময়ক্ষেপণ করে অযথা হয়রানি করছে। ফলে প্রকল্পের বিদেশি বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এতে করে সময় অপচয় এবং প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। তিনি প্রকল্পের বিনিয়োগ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সরকারের বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধাকদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যথায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এ ব্যাপারে সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর আমিনুল শিল্প গ্রুপের মালিক ও বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম হোটেল নির্মাণকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, সৈয়দপুরে গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে পিছিয়ে পড়া উত্তরাঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের থাকার জন্য আন্তর্জাতিকমানের ফাইভ স্টার হোটেল প্রয়োজন। সৈয়দপুরে ফাইভ স্টার হোটেল নির্মিত হলে এই অভাব থাকবে না। এতে বিনিয়োগকারীরা শিল্প স্থাপনে আকৃষ্ট হবে। তিনি হোটেল নির্মাণ দ্রুত শেষ করতে এবং বিনিয়োগে বাধা অপসারণে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।