রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

জলাবদ্ধতায় অনাবাদি তিন হাজার হেক্টর জমি

বাড়ছে জনদুর্ভোগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

জলাবদ্ধতায় অনাবাদি তিন হাজার হেক্টর জমি

দীর্ঘদিন অনাবাদি থাকায় একসময়ের ফসলি জমিতে জন্মেছে কচুরিপানা। নাটোরের সিংড়ার ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নাটোরের সিংড়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছু এলাকায় দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলবদ্ধতা। এতে একদিকে যেমন জনদুর্ভোগ বাড়ছে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষক। অনাবাদী হয়ে পড়েছে সিংড়ার প্রায় সাড়ে তিন হাজার চাষযোগ্য জমি। সিংড়ায় মরাগাঙ্গীনা (নদী) পুনঃখনন প্রকল্প অবৈধ দখলদারদের কারণে বন্ধ রয়েছে। এই নদীর জায়গা দখল করে পুকুর খনন, ধান চাষ করাসহ পাকা স্থাপনা তৈরি করেছেন কেউ কেউ। ফলে ৪০ গ্রাম ও ১৫টি বিলে জলাবদ্ধতার কারণে অনেক জমি চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি ১৩ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়। জানা যায়, বরেন্দ্র বহুমখী উন্নয়ন প্রকল্প জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং নদীতে ভূউপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে (ইআইএনডি) নামে মরাগাঙ্গীনা খনন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রভাবশালীদের বাধার কারণে ঠিকাদার কাজই শুরু করতে পারেননি। কেউ কেউ অবৈধ দলিল তৈরি করে পাকাপোক্তভাবে নদীর জায়গা দখল করে নিয়েছেন। তারা প্রকল্প বাতিলের দাবিতে মামলাও করেন। আদালতের নির্দেশে ওই মামলা বাতিল হলেও ঠিকাদারের লোকজনকে মারধর ও বাধার কারণে কাজ করতে পারছেন না। এলাকাবাসী বারবার জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করলেও মিলছে না প্রতিকার। সরেজমিন দেখা যায়, সিংড়া উপজেলার লালোর, সেরকোল, হাতিয়ানদহ ও কলম ইউনিয়ন এবং সিংড়া পৌরসভার নিঙ্গইন এলাকায় রয়েছে অসংখ্য বিল। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য রাখশা, ভাষাউড়া, হিয়ালা, মাইস্যাগাড়ী, লক্ষীতলা, পোচাকান্দুরা, খামাইর‌্যাকল, দয়ার বিল, কোমা-কামারের চোরা ও লেলিয়ার বিলসহ ১৫টি। এসব বিলের পাড়ের ৪০ গ্রামের হাজার হাজার কৃষকের কষ্টে অর্জিত ফসল পানিতে ভাষছে। অনেক খেতের উঠতি ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে। এর কারণ বিলের কৃষিজমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র জায়গা বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া বিলের নিচু জমিতে পুকুর খনন করায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে কৃষকের দুর্ভোগ ও উৎপাদন খরচ বাড়ছে। ভারী বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। আবার বর্ষা মৌসমের পানি যথাসময়ে নিষ্কাশন না হওয়ায় কৃষকের রবিশস্য আবাদ মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বিএমডিএ নাটোরের সহকারী প্রোকৌশলী আহসানুল করিম জানান, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ ও প্রচার হয়। কৃষকের কষ্ট ও এলাকাবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক সিংড়া উপজেলা প্রশাসনকে খাল খননের বিষয় নির্দেশ দেন। গত মৌসমে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি ফোল্ডারে খালটি (মরাগাঙ্গীনা) খননে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কার্যাদেশ দেয়। কিন্তু মামলা এবং প্রভাবশালীদের বাধার কারণে খনন কাজই শুরু হয়নি। নাটোরের জেলা প্রশাসক বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং কৃষি বিভাগের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছেন। সরকারের উন্নয়ন কাজে বাধা দেওয়ার বিষয়টি তাকে কেউ জানাননি। কৃষির উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন করা হবে। 

 

সর্বশেষ খবর