বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিনবিঘা করিডোর এক্সপ্রেস চালু হয়নি এক যুগেও

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

তিনবিঘা করিডোর এক্সপ্রেস চালু হয়নি এক যুগেও

২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসেছিলেন লালমনিরহাট পাটগ্রামের বহুল আলোচিত আঙ্গরপোতা-দহগ্রামে। উপজেলার দহগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বুড়িমারী-ঢাকা রুটে আন্তনগর ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সে প্রতিশ্রুতির প্রায় এক যুগেও চালু হয়নি বহুল প্রত্যাশিত ‘তিনবিঘা করিডোর এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি। ট্রেনটি চালু না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে লালমনিরহাটের তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। রাজধানী ঢাকায় যেতে হলে এসব মানুষকে বাস কিংবা একমাত্র লালমনি এক্সপ্রেসের উপর ভরসা করতে হয়। ফলে তাদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ সময় সমাবেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “এ অঞ্চলের মানুষ যাতে সহজেই রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য বুড়িমারী-ঢাকা রুটে একটি আন্তনগর ট্রেন চালু করা হবে। ট্রেনটির নাম দেওয়া হবে ‘তিনবিঘা করিডোর এক্সপ্রেস’।” প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি অত্র অঞ্চলের লাখো মানুষের মনে আশা জাগিয়ে ছিল। তখন থেকে সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে ‘তিনবিঘা করিডোর এক্সপ্রেস’ ট্রেনের নাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন যেন আজও লাল ফিতায় বন্দী। সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় সদর দফতর লালমনিরহাটে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ১১ জুন। রেল স্টেশনের নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন তিনি। সে সময় মন্ত্রী বলেছিলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘তিনবিঘা করিডোর এক্সপ্রেস’ চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।” এর তিনবছর পর ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনে এসেছিলেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। স্টেশনটি পরিদর্শন শেষে তিনবিঘা করিডোর এক্সপ্রেস চালুর বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি শিগগির বাস্তবায়ন করা হবে। খুব তাড়াতাড়ি চালু হবে ট্রেনটি। যেটি সরাসরি বুড়িমারী থেকে ঢাকায় চলাচল করবে।’ নতুন করে স্বপ্নের সেই ট্রেন চালুর প্রত্যাশা বাড়ে অঞ্চলের মানুষের। বারবার ট্রেন চালুর বিষয় কর্ম চঞ্চলতার কথা শোনা গেলেও আজও বাস্তবায়িত হয়নি সেই প্রতিশ্রুতির। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নেতাদের দেওয়া কর্মচঞ্চলতা দীর্ঘদিনেও প্রদর্শিত না হওয়ায় আশান্বিত লালমনিরহাটবাসী এখন আশাহত। স্বপ্ন দেখা মানুষগুলো এখন বিক্ষুব্ধ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো নমুনা দেখা যাচ্ছে না। রেলমন্ত্রীর নিজ এলাকা পঞ্চগড় থেকে পরপর ৪টি নতুন আন্তনগর ট্রেন চালু হয়েছে। রেলওয়ে বিভাগীয় সদর দফতর হওয়া সত্ত্বেও লালমনিরহাট বঞ্চিত রেলের সুবিধা থেকে। মাত্র একটি আন্তনগর ট্রেন যা অনেক পুরোনো এবং যাত্রী সেবার মানও উন্নত নয়। তাছাড়া লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে বুড়িমারীর রেলপথের দুরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। সেই বুড়িমারীতে স্থলবন্দর থাকলেও সরাসরি রাজধানীতে যাতায়াত ব্যবস্থার একমাত্র বাসই ভরসা। বুড়িমারী স্থলবন্দর সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা রুটে ৬০০-৮০০ যাত্রী ভারত- নেপাল-ভুটান যাতায়াত করছেন। ২ শতাধিক ব্যবসায়ী বুড়িমারী স্থলবন্দরে আসেন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য। বুড়িমারী-ঢাকা রুটে আন্তনগর ট্রেন ‘তিনবিঘা করিডোর এক্সপ্রেস’ চালু হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন, রেলটি চালু হলে বাণিজ্য প্রসার হবে এ অঞ্চলের। বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে রেলও। ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায়ই বুড়িমারী আসতে হয়। সড়কপথে বুড়িমারী আসা চরম বিড়ম্বনার। অনেক সময় লাগে। বুড়িমারী-ঢাকা রুটে আন্তনগর ট্রেন চালু হলে সহজে ও আরামদায়কভাবে চলাচল করা যাবে। আমার মতো অনেকে বুড়িমারীতে প্রায়ই আসেন।’ টাঙ্গাইল থেকে আসা বুড়িমারী স্থলবন্দরে সুনীল চন্দ্র সাহা নামের একজন জানান, ‘সড়কপথে বুড়িমারীতে আসতে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হয়।

সর্বশেষ খবর