শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

চায়ে সমৃদ্ধ লালমনিরহাটের অর্থনীতি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

চায়ে সমৃদ্ধ লালমনিরহাটের অর্থনীতি

লালমনিরহাটের একটি চা বাগান -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের অধিকাংশ জমি একসময় থাকত অনাবাদি। কালের বিবর্তনে পাল্টে গেছে অনেককিছু। প্রথমে তামাক চাষ এ জেলাকে গ্রাস করলেও কৃষি বিভাগের তৎপরতায় ভুট্টা চাষে বিপ্লব ঘটান এখানকার কৃষক। এখন চায়ে স্বপ্ন পূরণের পথে এ জেলার চাষিরা। চা চাষে দারিদ্র্যপীড়িত এ জেলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।

লালমনিরহাটের সমতল ভূমিতে চা চাষ হচ্ছে। সবুজ পাতায় ভরে উঠেছে প্রতিটি চা বাগান। ভালো ফলনে এ শিল্পে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষক। তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে খুশি চা বোর্ড কর্তৃপক্ষও। তথ্যমতে, জেলায় এখন পর্যন্ত চা বাগান গড়ে উঠেছে ১২৬টি। এসব বাগানে জমির পরিমণ প্রায় ২২২ একর। ধীরে ধীরে এর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো জেলায়। শুরুতে শুধু হাতীবান্ধা উপজেলায় চা চাষ হলেও এখন জেলার পাঁচ উপজেলায়ই গড়ে উঠেছে চা বাগান। সম্ভাবনাময় এই কৃষি শিল্পে সাফল্য পাওয়ায় এ জেলার কৃষকদের কাছে চা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চা বোর্ড জানিয়েছে, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় ২০০৭ সালে ১ একর সমতল ভূমিতে চা চাষ শুরু হয়। ২০১৫ সাল থেকে চা বোর্ডের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করেন এখানকার কৃষক। এরপর দিন দিন চা আবাদ বাড়ছে। কৃষকদের সফলতায় চা বোর্ডও রাখছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। জেলার দুই শতাধিক কৃষক চা চাষ করছেন। গড়ে প্রতি মাসে ১ একর জমি থেকে ১ হাজার ৫০০ কেজি চা পাতা সংগ্রহ করতে পারছেন তারা। জেলার চা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরুর দিকে এ বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা ছিল না। এরপর এই শিল্পের উন্নয়নে এগিয়ে আসে স্থানীয় চা বোর্ড। কৃষকরা চা বোর্ড কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে লাভবান হচ্ছেন। সমতল ভূমিতে চা উৎপাদন করতে পেরে খুশি তারা। তবে বিদ্যুৎ ও মূলধন সমস্যা থাকায় উৎপাদিত চা পঞ্চগড়ে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। এ কারণে পরিবহন খরচ বেশি লাগে। পাটগ্রামের চা চাষি এনায়েতুল্লাহ বলেন, দ্রুত এ জেলায় চা প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম শুরু করলে আমরা বেশি লাভবান হতে পারব। কারণ জেলার মাটি চা চাষের উপযোগী। গত চার বছরেই চা চাষ করে অর্থনীতির চাকা ঘুরে গেছে। হাতীবান্ধা উপজেলার বিছনদই গ্রামে ২০১৪ সালে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা চা কারখানাটি পুনরায় চালুর দাবি জানান চাষিরা। তারা মনে করেন এই কারখানা চালু হলে তাদের পরিবহন খরচ কমে যাবে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক (হাতীবান্ধা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) আরিফ খান বলেন, প্রতি বছরই বাগান বাড়ছে।

 লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় সমতল ভূমিতে চা উৎপাদন হচ্ছে। কৃষকদের সফলতায় আমরাও খুশি। এ অঞ্চলের মাটি চা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। চা চাষের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের শ্যালো মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিনামূল্যে সরবরাহ করছি। বিনামূল্যে কীটনাশক ও গাছের চারা দেওয়া হয়। চা বাগানের পরিচর্যা ও কাটার বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর