বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

পারাপারের ঝুঁকিতে দুই উপজেলার ৩ লাখ মানুষ

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

পারাপারের ঝুঁকিতে দুই উপজেলার ৩ লাখ মানুষ

নৌ-দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে কোড়ালিয়া-পানপট্টি নৌ-রুটে আগুনমুখা নদীতে ফেরি সেবা চালুর দাবি দীর্ঘদিনের। ফেরি না থাকায় সারা দেশের সঙ্গে স¤পূর্ণ সড়ক পথে যোগযোগ বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালী উপজেলা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্পিড বোটে প্রমত্তা আগুনমুখা পাড়ি দিচ্ছে দুই উপজেলার ৩ লাখ মানুষ। সন্ধ্যার পরে পারাপারে থাকে না কোনো বাহনই। রোগী ও পণ্য পরিবহন নিয়ে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের। চারদিকে সাগর আর নদী। মাঝখানের দ্বীপটির নাম রাঙ্গাবালী। লাল বালুর নামে নামকরণ করা হয়েছিল রাঙ্গাবালীর। ২ লাখ মানুষের এই দ্বীপটিতে রয়েছে নানান সম্ভাবনা। আছে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র সোনারচর, চরহেয়ার, জাহাজমারা, কৃষি ও মৎস্য ভান্ডার। ২০১২ সালে উপজেলা ঘোষণা হয়ে ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সারা দেশের সঙ্গে হয়ে ওঠেনি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।  এ যেন এক ভিন্ন জগত। দুই উপজেলার মানুষের পারাপারের বাহন শুধুমাত্র স্পিপড বোট। চলমান বর্ষায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে স্পিড বোটেই পাড়ি দিতে হয় খরস্রোতা নদী আগুনমুখা। সন্ধ্যার পরে থাকে না একেবারেই কোনো বাহনই। আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে এসেও সারা দেশ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকে এ জনপদ। যার ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের। তরমুজের রাজধানী খ্যাত রাঙ্গাবালীর কোটি কোটি টাকার তরমুজ ঘাটে বসেই নষ্ট হয়ে যায়। ভোগান্তির কোনো শেষ নেই যেন রোগীদের। চিকিৎসার নিতে যাওয়ার পথে এ নদীতে ট্রলার স্পিড বোটের মধ্যেই প্রাণ হারিয়েছে অসংখ্য রোগী। অসুস্থ রোগী হামিদা বেগম (২৯) বলেন, আমি যখন গর্ভবতী ছিলাম সিজারের জন্য জেলা সদর পটুয়াখালী রওয়ানা দিয়েছিলাম লঞ্চ স্পিড বোট না পেয়ে ৪ ঘণ্টা ঘাটে বসে ছিলাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে কাতরাচ্ছিলাম কিন্ত কোনো কিছুরই ব্যবস্থা হয়নি। পরে ঘাটে বসে আমার সন্তান প্রসব হয়েছে। মহিউদ্দিন মোল্লা বলেন, আমার বাবা অসুস্থ হয়ে কাতরাচ্ছিলেন। কিন্ত যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকার কারণে উন্নত চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। পটুয়াখালী জেলা হেড কোয়ার্টারের সঙ্গে রাঙ্গাবালীর সংযোগ সড়ক স্থাপন এবং ফেরির দূরত্ব কমাতে পানপট্টি ও কাউখালী সড়ক তৈরির জন্য পরিদর্শন করেন সড়ক জনপদের কর্মকর্তারা। পটুয়াখালী সড়ক জনপদের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান বলেন, আমরা ফেরির সংযোগ সড়ক করার জন্য দুই পাড় পরিদর্শন করেছি। কিভাবে রুট করলে ফেরির দূরত্ব কমবে সেটা আমরা দেখেছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা ব্যবস্থা নিব। পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মহিবুর রহমান মহিব বলেন, ফেরির চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষা। তবে এ ফেরিটি চালু হলে রাঙ্গাবালী উপজেলা হবে একটা মডেল উপজেলা। যাতায়াতে মানুষের যেমন ভোগান্তি কমবে তেমনি উন্নয়ন ঘটবে পর্যটন শিল্পের। পায়রা বন্দরের জাহাজ নোঙর করবে এই রাঙ্গাবালীতেই। তাই সড়কপথে সংযোগ স্থাপন হলে এখানে গড়ে উঠবে শিল্প-কারখানা। নতুন পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হবে সোনারচর, চরহেয়ার ও জাহাজমারা সমুদ্র সৈকত। একটি ফেরি পাল্টে দিতে পারে এ জনপদের মানুষের ভাগ্য।

সর্বশেষ খবর