সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

বধ্যভূমিতে বহুতল ভবন!

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

বধ্যভূমিতে বহুতল ভবন!

লক্ষ্মীপুরে দখল হয়ে যাচ্ছে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা বধ্যভূমিগুলো। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানে গড়ে উঠছে বহুতলভবনসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়রা। বধ্যভূমি দখলমুক্ত করে সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দখলদাররাও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে দ্রুত বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতনমহল। যদিও পর্যায়ক্রমে সবকটি বধ্যভূমি সংস্কার করার কথা জানায় জেলা প্রশাসন। মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে বিজয় অর্জন পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের এম ইউ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের এ জায়গাতে গণকবর দেওয়া হয়েছিল অন্তত ১০০ জনকে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের গাফিলতিতে এই বধ্যভূমিতে গড়ে উঠছে বহুতলভবন। নতুন করে স্থাপনা নির্মাণেরও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। তাদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধের পর দীর্ঘ বছর পার হলেও প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় জমির মালিক তাদের কাছে বধ্যভূমির জমিটি বিক্রি করে দিয়েছে। এদিকে, মুক্তিযুদ্ধের ওই সময়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালায় হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী। সদর উপজেলার বাগবাড়ির আশপাশের ৪-৫টি গ্রামের কয়েক হাজার নিরীহ গ্রামবাসীকে সারের গুদামে টর্চার সেলে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। লাশ ফেলে দেওয়া হতো মাদাম ব্রিজের পাশে একটি কূপে। শহরের সেই বধ্যভূমি এখন গো আর ঘোড়ার চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া রামগতি ও রায়পুরের বিভিন্ন স্থানে চালানো হয় গণহত্যা। এ রকম অনেক বধ্যভূমি পড়ে আছে অযতœ-অবহেলায়। অনেকে চলে গেছে প্রভাবশালীদের দখলে। শহীদ পরিবারের কয়েকজন সন্তান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছরেও বীর শহীদদের সম্মান জানানো হচ্ছে না। জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বধ্যভূমির জমি দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। প্রশাসনও প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছে না। জমিও অধিগ্রহণ করছে না তারা। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, ইতোমধ্যে জেলা শহরের বাগবাড়ি গণকবর, বাসুবাজার বধ্যভূমি, পিয়ারাপুর ব্রিজ বধ্যভূমি সংরক্ষণ করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বধ্যভূমি সংরক্ষণ করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কথা জানান জেলা প্রশাসক। প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে ৯ মাসে পাক হানাদারদের সঙ্গে ২১টি সম্মুখযুদ্ধ হয় লক্ষ্মীপুরে। প্রায় ৯০টি অভিযানে অংশ নেয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। জেলায় বধ্যভূমির সংখ্যা আনুমানিক ১০০টি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর