রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

অপরাধীদের অভয়াশ্রম ফেনী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা

জমির বেগ, ফেনী

সব ধরনের অপকর্মের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে ফেনী রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশের এলাকা। এ যেন একের ভিতর সব অপকর্মের নিরাপদ আশ্রয়। ছিনতাইকারী, মাদকসেবী, ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে ফেনী রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশের এলাকা। তাদের উৎপাতে অতিষ্ঠ স্টেশনে আগত যাত্রী সাধারণসহ এ পথ দিয়ে চলাচলরত সাধারণ জনগণ। জানা যায়, রেলওয়ে প্লাটফরম থেকে রেলক্রসিং পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত বসে মাদকসেবীদের মিলনমেলা। তাদের দেখভালের দায়িত্বে থাকেন এলাকার প্রভাবশালী বড় ভাইরা। এ এলাকায় মাদক বিকিকিনির হিড়িক দিন দিন বাড়ছে। রেলওয়ের জায়গা দখল করে রেল লাইনের দুই পাশে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন অবৈধ স্থাপনা। মাহে রমজানেও এখানে প্রকাশ্য দিবালোকে বিক্রি হচ্ছে খাবার। অবাধে খাবার বিক্রি না করার নির্দেশনা থাকলেও মানছে না কেউই। পর্দার অন্তরালে খাবারের পাশাপাশি তারা চালিয়ে যাচ্ছেন মাদকের রমরমা ব্যবসাও। হাত বাড়ালেই এখানে মিলছে নেশাজাতীয় বিভিন্ন দ্রব্য। এখান থেকে মাদক পাওয়া সহজলভ্য হওয়ায় বেড়েছে ক্রেতা। এ এলাকায় বেড়েছে চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। রাজনৈতিক কয়েক বড় ভাইয়ের ছত্রছায়ায় এসব অপকর্ম চলছে বলে জানা যায়। তাদের ভয়ে মুখ খুলছেন না স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদকের টাকা জোগানোর জন্য তারা করছেন চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। তাদের টার্গেট থাকে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতরত যাত্রীরা। সুযোগ বুঝে ব্যাগ ধরে দেয় টান। তারপর ভৌ-দোড়। চুরির মালমালের মধ্যে বিশেষ করে মোবাইল বিক্রি হচ্ছে স্টেশন রোডের বিভিন্ন দোকানে। তাদের খপ্পরে পরে সর্বশান্ত হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। এত কিছুর পরও প্রশাসনের নেই তেমন কোনো নজরদারি। সন্ধ্যা নামলেই দেখা যায় পতিতাদের আনাগোনা। রেললাইনের দুই পাশে বসে উঠতি বয়সী তরুণদের আড্ডা। গ্রুপ বেঁধে তারা খেলেন লুডু। প্রায় সময় লুডু খেলাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে ঘটে মারামারির ঘটনা। প্রথমে চলে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ। পরে চলে দেশি অস্ত্রের মহড়া। আতঙ্কে থাকে জনগণ।

 স্টেশন রোডের বিভিন্ন ব্যবসায়ী জানান, ছিনতাইকারীরা সাধারণত চোরাই মোবাইল বেশি বিক্রি করেন। তবে তারা যদি বোঝেন মোবাইলটি চোরাই, তাহলে তারা তা কেনেন না। তবে কেউ কেউ হয়তো কিনতে পারেন। তারা জানান, পুরাতন মোবাইল শুধু স্টেশন রোডের দোকানদাররা যে কেনে তা নয়, জেলার বিভিন্ন স্থানে পুরাতন মোবাইল ক্রয়-বিক্রয় হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টেশন রোডের বিভিন্ন ব্যবসায়ী জানান, স্টেশন এলাকায় এসব অপকর্ম যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। দেশের বিভিন্ন স্টেশন এলাকায় অপকর্ম হয় না তা তো ভাবাই যায় না। তারা জানান, কিছু টোকাই ও উঠতি বয়সের ছেলেদের উৎপাত স্টেশন রোড ও আশপাশের এলাকায় আগের চেয়ে বেড়েছে। রমজান ও আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বখাটেদের লাগাম টেনে ধরার দাবিও জানান তারা। ফেনী রেলওয়ে স্টেশনের ইনচার্জ (জিআরপি পুলিশ) পুলিশের উপপরিদর্শক আমজাদ আলী জানান, তিনি চলতি বছরের ২ জানুয়ারি ফেনীর কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। এ সময়কালের মধ্যে চুরি, ছিনতাই ও মাদক বেচাকেনার কোনো ঘটনার অভিযোগ তিনি পাননি। গত সোমবারও তিনি কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে বাজে আড্ডার জন্য বের করে দিয়েছেন। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি। কেউ যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেলওয়ের জায়গায় যে অবৈধ স্থাপনা আছে জিআরপি পুলিশ সাধারণত সেখানে যায় না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যদি নির্দেশনা দেয় সেখানেও অভিযান চালানো হবে।  তিনি বলেন, গত বছরের আক্টোবর মাসে দুর্বৃত্তরা রেলওয়ে পুলিশের এক কনস্টেবলকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে আহত করেছিল। সে ঘটনায় ১৩ জনকে আসামি করে তিনটি মামলা  হয়েছে। একটি মামলায় চার্জশিট হয়েছে। বাকি মামলার চার্জশিটও সহসাই হয়ে যাবে। ফেনী রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. হারুন বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। তিনি জিআরপি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দেন।  

সর্বশেষ খবর