কোটা আন্দোলন ঘিরে চলা সহিংসতায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে মাদারীপুরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার জেলার অন্তত ১০ প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একটি পেট্রোল পাম্প, ৩২টি যাত্রীবাহী বাস, তিনটি ট্রাকসহ বহু ছোট যানবাহন। এসব ঘটনায় ৪০ কোটি ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে দাবি করা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে এক যোগে হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা জেলা আওয়ামী লীগ কর্যালয়, এসপি-ডিসির কর্যালয়সহ বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। সদর থানাধীন ১ নম্বর পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরদিন বিকালে আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনা মহাসড়কের মস্তফাপুর থেকে একযোগে হামলা শুরু করে। মস্তফাপুর গোল চত্বরের ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও একটি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পল্লী বিদ্যুতের গেস্ট হাউসে ভাঙচুর চালায়। পুলিশের প্রতিরোধ ভেঙে শাজাহান খানের মালিকানাধীন সার্বিক পেট্রোল পাম্পে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পেট্রোল পাস্পের পিছনে থাকা সার্বিক পরিবহনের ডিপোতেও আগুন দেয়। এতে অন্তত ৩২টি বাস আগুনে পুড়ে যায়। ভাঙচুর করা হয় আরও পাঁচটি বাস। পরে নতুন বাসস্ট্যান্ড, সার্কিট হাউস, লেকভিউ হোটেল, মহিলা সংস্থা কার্যালয়, পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম ভবনে ভাঙচুর চালায়। শনিবার ভোররাতে শহরের শকুনিলেকের দক্ষিণপাড়ে অবস্থিত পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম পুড়িয়ে দেয়।
মাদারীপুর শহরের বাসিন্দা বিল্লাল মোল্লা বলেন, আমার বয়স ৪০ বছর। আমরা জীবনে মাদারীপুরে এ রকম ধ্বংসযজ্ঞ দেখি নাই। সার্বিক পরিবহনের ব্যবস্থাপক গোপাল হালদার বলেন, আমাদের বাসগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সরকারিভাবে সাহায্য-যোগিতা পেলেও পেট্রোল পাম্পসহ পরিবহন চালু করতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগে যাবে।
পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, আগুনে পৌর অডিটোরিয়ামের ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ছাত্র আন্দোলন ইস্যু করে বিএনপি-জামাত চোরাগুপ্ত হামলা করেছে। এ আগে তারা ভাঙচুর চালিয়েছে। সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। মাদারীপুরের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচটি মামলায় হয়েছে। দোষিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জেলা প্রশাসক মারুফুর রশীদ খান বলেন, তদন্ত কমিটি করে ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা হয়েছে। পুরো জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০ কোটি ৮ লাখ টাকা।