দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটের চারটি বীজাগার। কৃষি বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ের এসব জীর্ণ ভবনের সবই বর্তমানে পরিত্যক্ত পড়ে আছে। এমনকি কিছু ভবনের জমির দলিল ও রেকর্ড নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সদরে তিনটি বিএস ভবন ও একটি বীজাগার রয়েছে। আদিতমারীতে রয়েছে পাঁচটি বিএস ভবন, দুটি বীজাগার ও একটি উদ্ভিদ সংরক্ষণাগার। কালিগঞ্জে বিএস ভবন রয়েছে ৪টি। এ উপজেলায় বীজাগারের সংখ্যা একটি। হাতিবান্ধায় তিনটি বিএস ভবন ও পাটগ্রামে তিনটি বিএস ভবন রয়েছে। এসব বিএস ভবনের প্রতিটিতে ইউনিট রয়েছে দুটি করে। রয়েছে তিনটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি করে টয়লেট। অন্যদিকে বীজাগারগুলোয় কক্ষ রয়েছে তিনটি করে। একই সঙ্গে এসব ভবনের বিপরীতে কৃষি বিভাগের জমি রয়েছে ১১-৮৬ শতক পর্যন্ত। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০-৬১ সালের দিকে বীজাগার হিসেবে এসব ভবন নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৮০-৮১ সালের দিকে অধিকাংশ ভবন রূপান্তর করা হয় ব্লক সুপারভাইজারের (বর্তমানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা) বাসভবন হিসেবে। কিন্তু এরপর ভবনগুলোর আর সংস্কার হয়নি। সংশ্লিষ্ট উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বসবাস ও ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় ১৯৮৬-৮৭ সালের পর থেকে এসব ভবনে আর কেউ থাকছেন না। একই সঙ্গে পরিত্যক্তভাবে পড়ে আছে বীজাগারগুলো। সরেজমিনে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ বিএস ভবনগুলোর বেশির ভাগই বর্তমানে ঝোপঝাড়। খুলে নেওয়া হয়েছে দরজা-জানালা। কয়েকটিতে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন কিছু ভূমিহীন মানুষ। অনেক স্থানেই ভবনের আশপাশের জমি ব্যবহার করছে স্থানীয়রা। এমনকি কেউ কেউ এ জমি নিজের নামে নথিভুক্ত করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে কৃষকরা বলেন, আগে এসব ভবনে কৃষি কর্মকর্তারা থাকতেন। ফলে ফসলের কোনো সমস্যা হলে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ পাওয়া যেত। বীজাগার থেকে ভালো মানের বীজও মিলত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ভবনগুলোয় আর কেউ থাকেন না। মূলত দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ভবনগুলো বর্তমানে পুরোপুরি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাতে পরিত্যক্ত এসব ভবনে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। তাদের দাবি, এসব ভবন সংস্কার করে আবারও বসবাসের উপযোগী করা হোক, যাতে তারা সহজে কৃষি-সংক্রান্ত পরামর্শ পেতে পারেন। আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, আদিতমারীর ৮টি ইউনিয়নে ৫টি বিএস কোয়ার্টার ও বীজাগার রয়েছে। এর মধ্যে পরিত্যক্ত ও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ৪টি। এর একটি ব্যবহার হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের অফিস হিসেবে। এ বিষয়ে ভূমি সেটেলমেন্ট অফিসে আপত্তি জানানো হয়েছে। হাতিবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, এ উপজেলায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার অফিস কাম বাসভবন রয়েছে তিনটি। এর সবগুলোই এখন পুরোপুরি পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকের দোরগোড়ায় কৃষিসেবা ও বিভিন্ন ফসলের উন্নত বীজ সময়মতো পৌঁছে দিতেই এসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, জেলার ৫টি উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বসবাস ও বীজাগারের জন্য নির্মিত ভবনগুলো বেশ পুরনো। এগুলো দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। তাছাড়া এসব ভবন ও সংশ্লিষ্ট জমিগুলো কৃষি বিভাগের দখলে থাকলেও দলিল ও রেকর্ড নিয়ে জটিলতা রয়েছে, যা নিরসনে কাজ করছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। আশা করা হচ্ছে, জটিলতা নিরসন হলে এসব ভবন ইউনিয়ন কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম বাসস্থান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ফলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে থাকতে পারবেন। তাছাড়া পর্যায়ক্রমে সব উপজেলাতেই এ ধরনের ভবন নির্মাণ করা হবে।