শিল্পাঞ্চল খ্যাত নারায়ণঞ্জের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে যানজট। অব্যবস্থাপনায় যেন ভেঙে পড়েছে শহরের ট্রাফিকব্যবস্থা, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির বাস শহরে প্রবেশ, বাধাহীন ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল, যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামা, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কোনোভাবেই যেন তা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত যানজটে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে। কোনো কোনো সময় ছুটির দিনেও সড়কগুলোতে তীব্র যানজট থাকে। পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছোট এ শহরে বিভিন্ন পরিবহনের রেজিস্ট্রিকৃত বাস রয়েছে ২৮৩টি। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ঢাকা-নারায়ণঞ্জ রুটে নতুন করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তিনটি পরিবহনের বাস চালু করা রয়েছে। যাদের বাসের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। যেগুলো নিয়মিত ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরে যাতায়াত করে। এর বাইরেও অনেক বাস রয়েছে। যাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। একই সঙ্গে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক রয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার। যেগুলো আগে যথেচ্ছভাবে শহরে প্রবেশ করার সুযোগ পেত না। ক্ষমতার পটপরিবর্তনে ট্রাফিকব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যখন-তখন যেভাবে খুশি শহরে প্রবেশ করছে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, পিকআপ ভ্যান, ট্যাংক লরি, ট্রাক, লেগুনা, ট্রাক্টর তো রয়েছেই। তাদেরও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। শহরে বের হলেই ৫ থেকে ১০ মিনিটের রাস্তায় এখন সময় লাগছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
স্থানীয়রা বলছেন, শহরে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। রাস্তার পাশে বিশাল মার্কেট নির্মাণ করা হলেও সেগুলোতে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। কিছু মার্কেটে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় চলছে দোকান, শোরুম, রেস্টুরেন্ট। শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় দীর্ঘ সময় ধরে সড়কের ওপর পার্কিং করে রাখা হয় অসংখ্য প্রাইভেট কার, বাইক। এতে নির্দিষ্ট লেনের গাড়িগুলো পর্যাপ্ত জায়গা না পেয়ে আটকে থাকে দীর্ঘ সময়। শহরে যত্রতত্র গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড। সিটি করপোরেশন নির্ধারিত বৈধ স্ট্যান্ড রয়েছে ৫টি। বাকি সবই অবৈধভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়াতেই রয়েছে কমপক্ষে ৮টি অবৈধ স্ট্যান্ড। এগুলো বছরের পর বছর ধরে বহাল রয়ে গেছে। গাড়িগুলো শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তার মাঝখান থেকে যাত্রী ওঠানো-নামানো করে আসছে। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। রাস্তার দুই পাশে এলোমেলোভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখায় যানজট আরও বাড়ছে। বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পরিচালক ইঞ্জি. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। ফিটনেসবিহীন ও রুট পারমিটহীন গাড়িগুলোকে মামলা দিয়ে ডাম্পিং ও জরিমানার আওতায় আনছি। পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যানজট সমস্যার কারণে নগরবাসীকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তা নিরসন করতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। ইতোমধ্যে শহরে অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে ফুটপাত হকারমুক্ত করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা, শহরে থাকা যানবাহন স্ট্যান্ডগুলো দূরে সরিয়ে নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, শহরের কিছু অংশে রাস্তার অবস্থা শোচনীয়। আমরা তা সংস্কার করার জন্য নাসিকের প্রশাসককে জানিয়েছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। অতি শিগগিরই ভাঙা সড়ক মেরামত করে দেওয়া হবে। এসব পদক্ষেপ নেওয়া হলে যানজট অনেকটাই কমে যাবে।জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, অবৈধ পরিবহনের ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ শহরকে যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।