নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় ২ লাখ ৬ হাজার ৫৪৭ জনের বাস। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করে ২০০৯ সালে এখানে নির্মাণ করা হয় ৫০ শয্যার হাসপাতাল। জনবল সংকট এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মেডিকেল অফিসারের ১৮টি পদের ১২টিই শূন্য। তৃতীয় শ্রেণির ৯০ লোকবল থাকার কথা, আছেন ৩৬ জন। চতুর্থ শ্রেণির ২৯ জনের স্থলে ৯টি পদ ফাঁকা। অভিযোগ আছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ পদায়নকৃত ছয়জন মেডিকেল অফিসার ঠিক সময়ে কর্মস্থলে আসেন না। তারা সবাই নওগাঁ শহরে বসবাস করেন।
উপজেলার আধাইপুর থেকে জমেলা বেগম এসেছিলেন হাসপাতালে সেবা নিতে। তার হাত ভেঙে গেছে। তিনি কান্না করছেন আর বলছেন, অনেকক্ষণ হলো এসেছি। কোনো ডাক্তার নেই। কী সেবা পাব আমরা। স্থানীয় বাসিন্দা কফিল উদ্দীন জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শুধু কর্মস্থলে অনুপস্থিতই থাকেন না, মাসের পর মাস সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন ব্যক্তিগত কাজে। সরকারি কোয়ার্টারে থাকার নিয়ম থাকলেও যোগদানের পর নওগাঁ শহর থেকেই অফিস করেন তিনি। যেন এসব দেখার কেউ নেই। স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু হাসান বলেন, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর রাতে হাসপাতালে চুরির ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় হাসপাতালে দুজন নাইট গার্ড থাকার কথা থাকলে তারা ছিলেন কি না সন্দেহ রয়েছে। কারণ তারা নিয়মিত রাতে জুয়া খেলেন। হাসপাতাল পাহারা দেবেন কীভাবে।
আউটডোরের টিকিট কাউন্টারে প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে টিকিট বাবদ ৩ টাকা করে নেওয়ার কথা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ৫ টাকা। আউটডোরের চিকিৎসকদের সকাল ৯টার মধ্যে আসার কথা, তারা আসেন বেলা ১১টায়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারহানা বলেন, চুরির ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। আউটডোরে রোগীর কাছ থেকে ৩ টাকার টিকিটে ৫ টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর অফিস স্টাফদের নিষেধ করেছি। দাপ্তরিক কাজের জন্য মাঝে মাঝে হাসপাতালে আসতে দেরি হয়। তবে নিয়মিত অফিস করার চেষ্টা করি। গাড়ির ব্যাপারে এটা একটা প্রকল্পের গাড়ি। প্রকল্পটি আপাতত বন্ধ থাকায় এক বছর ধরে জ্বালানি বাবদ কোনো বিল পাইনি। গাড়িটি সচল রাখার স্বার্থে নিজ খরচে ব্যবহার করছি। নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি দেখছি। বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন যাচাই করা হবে। কর্মস্থলে কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি বা সময় মতো না আসার যে অভিযোগ রয়েছে এর সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।