ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার একর আবাদি জমি এখন পানির নিচে। দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কারণে চাষিরা মাঠে কোনো ফসল ফলাতে পারছেন না। যারা অল্প কিছু ফসল ও সবজি বুনেছিলেন তারাও পড়েছেন মারাত্মক ক্ষতির মুখে। ইউনিয়নেরর ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় তিন হাজার কৃষক পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তি সরকারি জায়গা ভরাট করে খালের প্রবেশমুখ বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু খালের পানি প্রবাহের প্রবেশমুখই নয়, পাশের রেল ব্রিজ এবং মহাসড়কের একটি সেতুর নিচেও মাটি ফেলায় পানি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে বৃষ্টি বা অতিরিক্ত জোয়ারে মাঠে একবার পানি ঢুকলে আর নামতে পারে না। এ বিষয়ে কৃষকরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও মেলেনি প্রতিকার। খেত জলাবদ্ধমুক্ত করতে খাল পুনরুদ্ধার এবং কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দাবিতে মানববন্ধন পালন করেছে বাংলাদেশ কৃষক সমিতি। স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল দুপুরে এ মানববন্ধন পালন করা হয়। পরে তারা জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি দেন।
কৃষকদের অভিযোগ, ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর বারোখাদা, রসুলপুর, রুদ্রপাড়া এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বেশকিছু এলাকার প্রায় ২ হাজার একর ফসলি জমি দীর্ঘদিন ধরে তলিয়ে আছে। এসব জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিন হাজার কৃষক। এখানে ধান, পাট, তিল, মরিচসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ হতো। চাষিরা জানান, কয়েকদিন আগে তারা এ বিষয়ে একটি সভা করেছেন। বিষয়টির দ্রুত সুরাহা না হলে তারা মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেবেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য কবির খান বাচ্চু বলেন, ‘একটি জুটমিলের মালিক সরকারি খাল ভরাট করার কারণেই তিন হাজার কৃষক মরতে বসেছেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দরখাস্ত করলেও প্রতিকার পাচ্ছি না। আমরা চাই এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।’ অভিযুক্ত জুট মিলের মালিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশরাত জাহান বলেন, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে। সূত্র জানায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের শিবরামপুর এলাকার জুট মিলের মালিক সড়ক বিভাগের অধীনে থাকা জায়গা দখল করে ভরাট করেছেন। ফলে ওই জমিসহ আশপাশের এলাকার পানি চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। মহাসড়কের একটি সেতুর মুখও ভরাট করা হয়েছে। এই সেতুর নিচ দিয়ে বিভিন্ন স্থানের পানি ভুবনেশ্বর নদ হয়ে কুমার নদে গিয়ে পড়ত। এটি বন্ধ হওয়ায় বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় ফসলি জমি। পশ্চিম চাঁদপুর গ্রামের কৃষক বক্কার শেখ, সেলিম শেখ, মানু কাজী জানান, তারা মাঠে কোনো ফসল ফলাতে পারেন না। কাকলী বেগম নামে এক কৃষানি বলেন, ‘আমি কয়েক বিঘা জমিতে পুঁইশাক ও মরিচ লাগিয়েছিলাম। পানিতে সব ডুবে গেছে।’