লালমনিরহাটে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা স্প্যার বাঁধের নিচে বসানো হয়েছে বালুখেকো চক্রের বোমা মেশিন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে লুট হচ্ছে তিস্তা নদীর বালু। অবাধে বালু তোলায় হুমকির মুখে পড়েছে এ বাঁধ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বোমা মেশিনটি স্প্যার বাঁধের নিচেই। এতে সেখানে বড় গর্ত হওয়ায় যেকোনো মুহূর্তে ধসে যেতে পারে বাঁধটি। এটি ধসে গেলে শত শত বসতভিটা, স্থাপনা ও আবাদি জমি তিস্তার কড়াল গ্রাসে বিলীন হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, একই স্থান থেকে প্রতি বছর বালু উত্তোলন করায় বাঁধটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বন্যার সময় বাঁধটি কেঁপে ওঠে। বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করলে স্থানীয় নেতাদের দিয়ে হয়রানি করা হয়। তাই কেউ প্রতিবাদ করেন না। জানা গেছে, নদীভাঙন রোধে ২০০২ সালে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন গ্রামে তিস্তা নদীর বাম তীরে সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ নির্মাণ করা হয়। সে বাঁধের ১০০ গজ ভাটিতে বোমা মেশিন বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করছে বালুখেকো চক্র। যার নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের এপিএস মিজানুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী শওকত হোসেন ওরফে বালু শওকত। ১০ বছর এপিএস মিজানের তিস্তা নদীর বালু উত্তোলন ও বিক্রির ব্যবসা দেখভাল করতেন শওকত। মিজান পলাতক হলেও খোলস পাল্টিয়ে ব্যবসা চালু রেখেছেন শওকত আলী। সরেজমিন দেখা যায়, সলেডি স্প্যার বাঁধের মাত্র ১০০ গজ ভাটিতে বোমা মেশিন বসিয়ে দক্ষিণে প্রায় ৫০০ গজ দূরে মজুরবাড়ির পাশে স্তূপ করা হচ্ছে বালু। সুযোগমতো ওই বালু সরিয়ে নেওয়া হবে ট্রাকে, এমন দাবি স্থানীয়দের। সেখানে কর্মরত একজন শ্রমিক বলেন, শওকতের নির্দেশে বালু তোলা হচ্ছে। তার মেশিন, তার তেল আমরা তার হয়ে কাজ করছি। বালু প্রসঙ্গে কিছু জানতে হলে শওকতের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন ওই শ্রমিক। এসব বিষয়ে শওকত আলী ওরফে বালু শওকত বলেন, সলেডি স্প্যার বাঁধের ভাটিতে প্রায় ১৩ হাজার জিও ব্যাগে বালু ভরাট করার কাজ পেয়েছেন দিনাজপুরের এক ঠিকাদার। তার হয়ে আমি নদী থেকে বালু উত্তোলন করেছি। এখন কে বালু উত্তোলন করছে তা আমার জানা নেই। স্প্যার বাঁধের কাছে বালু মেশিন বসানোর কারণে বাঁধের ক্ষতি হবে কি না- এ প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। মূল ঠিকাদারের নাম-নম্বর চাইলেও দেননি তিনি। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, জিও ব্যাগে বালু ভরাট ও ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান। বালু স্থানীয়ভাবে ম্যানেজ করার কথা হয়েছে। তবে বাঁধের নিচে মেশিন বসানো ঠিক নয়। বিষয়টি দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিধান কান্তি হালদার বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।