মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে মাদকের পাশাপাশি প্রচুর অস্ত্র আসছে। সীমান্তরক্ষীদের কাছে কিছু ধরা পড়লেও বেশির ভাগ মাদক-অস্ত্রই ঢুকছে রোহিঙ্গা শিবিরে। এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাদক-অস্ত্র যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) রামু সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ মাদকের পাশাপাশি অস্ত্র আসছে উল্লেখ করে বলেন, আরাকান আর্মি মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে। উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট ও উপকূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের কারণে মাদক আনার রুট পরিবর্তন করেছে পাচারকারীরা। সম্প্রতি সীমান্ত দিয়ে মাদকের পাশাপাশি মাছ ধরার ট্রলারে অস্ত্র আনা হচ্ছে। বিশেষ করে ইয়াবার বড় চালান মিয়ানমার থেকে নৌপথে এনে সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে বাংলাদেশের জলসীমানার বাইরে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে যাওয়া হয়। টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, সমুদ্র পথের চেয়ে স্থল সীমান্ত দিয়ে অস্ত্রগুলো বেশি আসে। সীমান্ত পার হয়ে কারবারিরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশে অবস্থান করে। পরে সুযোগ বুঝে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে।
শতকরা ৮০ ভাগ চোরাচালান সাগর পথে উপকূলীয় অঞ্চল দিয়ে হয়ে থাকে উল্লেখ করে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, সমুদ্রপথে টেকনাফে বঙ্গোপসাগর হয়ে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটুয়াখালী, কুয়াকাটায় চোরাচালান পৌঁছে দিচ্ছে কারবারিরা। গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে মহিউদ্দিন আহমদ এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, বিজিবি মিয়ানমার সীমান্তে ১৫ জুলাই থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকারের ২২টি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। বিজিবি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৪ মাসে অভিযান চালিয়ে ৪৬ লাখ ৬০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে বিজিবি। আটক করা হয়েছে ৩৩৩ জন। গত ১৫ জুলাই থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর এই দুই মাসে ২৮ লাখ পিস ইয়াবা, ৮১৬ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১৬৮ ক্যান বিয়ার ও ৩৬৫ লিটার বাংলা মদ উদ্ধার করেছে। আটক করা হয়েছে ১৮৮ জনকে।
বিজিবি জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, অসাধুচক্র দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র অনুপ্রবেশ করানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিজিবি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত তিন মাসে বিজিবি ১৬টি দেশি-বিদেশি পিস্তল, দুটি রিভলভার, দুটি এসএমজি, ৫টি রাইফেল, ১৬টি দেশি বন্দুক, ৩টি শর্টগান, ৩টি মর্টার শেল, ৮টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ২৭টি অন্যান্য অস্ত্র, ২১টি ম্যাগাজিন এবং ১০০৩ রাউন্ড বিভিন্ন অস্ত্রের গোলাবারুদ জব্দ করেছে।
২৭ আগস্ট কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের খুরের মুখ এলাকায় বিজিবির সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার পর অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। বিজিবি সদস্যরা পরিত্যক্ত অবস্থায় দুটি জি-৩ রাইফেল, একটি এমএ-১ রাইফেল, একটি এলএম-১৬ রাইফেল এবং আটটি ম্যাগাজিনসহ মোট ৫০৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। ১১ আগস্ট উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী সীমান্তে বর্ডার গার্ড বিজিবির কাছে একে-৪৭ রাইফেলসহ এক তরুণ আত্মসমর্পণ করেছে। বিজিবি তাকে আরাকান আর্মির সদস্য বলে দাবি করেছে। ৮ সেপ্টেম্বর ভোররাতে উখিয়া উপজেলার ১৪ এপিবিএন বিশেষ অভিযান চালিয়ে রহমত উল্লাহ (৩৪) নামে এক রোহিঙ্গাকে ১টি দেশি ওয়ান শুটার গান, ৫ রাউন্ড গুলি ও ১টি ধারালো চাকু উদ্ধার করেছে। উখিয়া ৬৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, বিজিবি চোরাচালান রোধে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।