দেড় শ বছরের পুরোনো ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকায় গড়ে ওঠেনি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বর্জ্যরে ভারে ধুঁকছে প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভা। ডাম্পিংয়ের নামে প্রতিদিন আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয় খোলা স্থানে অথবা সড়কের পাশে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। ১৮৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় প্রায় ৩ লাখ মানুষের বসবাস। পৌর এলাকায় বসবাসকারীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বর্জ্যরে পরিমাণ। প্রতিদিন উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ বর্জ্য পরিশোধন করতে না পেরে রাখতে হচ্ছে বিভিন্ন সড়কের পাশে। ছড়িয়েছিটিয়ে থাকছে অলি-গলিতেও। আবর্জনার উৎকট দুর্গন্ধে ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে। নোংরা পরিবেশে বংশবিস্তার ঘটছে মশা-মাছিসহ বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক নানান পোকামাকড়ের।
সরজমিনে দেখা যায়, জনবহুল স্থানে খোলা আকাশের নিচে বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে বর্জ্যরে ভাগাড়। ডাম্পিং স্টেশনে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ফেলে রাখা হয়েছে ব্যস্ত সড়কের পাশেও। গোকর্ণ-পৈরতলা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের চলাচল। এ পথে চলতে গিয়ে সাধারণ মানুষের দম বন্ধের অবস্থা হয়। কেউ নাক চেপে, কেউ মুখে হাত দিয়ে কোনোমতে পার হচ্ছেন। শহরের জনবহুল ও মিনি পার্ক খ্যাত টেংকেরপাড় এলাকার মূল ফটকের সামনে মডেল ডাস্টবিনের নামে বর্জ্য স্তূপ করে রাখা হয়। বাণিজ্যেক এ এলাকার ওপর দিয়ে দিয়ে অন্তত ১০-১২টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্র্থী চলাচল করে। রয়েছে প্রাইভেট হাসপাতাল ও কমিউনিটি সেন্টার। প্রতিদিন সড়ক দখল করে এ পয়েন্টে চলে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ। এতে দুর্গন্ধে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে। বৃষ্টি হলে বর্জ্য চলে আসে রাস্তায়। স্থানীয়দের অভিযোগ পৌর কর্তৃপক্ষকে বার বার ভোগান্তির কথা জানানোর পরও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। পৌরবাসী জানান, অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে বিভিন্ন এলাকার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। বর্জ্যরে স্তূপ বাসাবাড়ির আঙিনা পর্যন্ত এসে পড়ে। ঘরের দরজা-জানালা সব সময় বন্ধ রাখতে হয়। ছয়বাড়িয়ায় ডাম্পিং স্টেশন হলেও কোনো বেষ্টনী নেই। দুর্গন্ধ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। কষ্টে অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র ঘর ভাড়া করে থাকছেন। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি শ্বাসকষ্টে ভুগছে সাধারণ মানুষ। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দেখা দিতে পারে পরিবেশ বিপর্যয়। জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি আবদুন নূর বলেন, পুরো পৌরসভাই এখন বর্জ্যরে ভাগাড়। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় এ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য স্তূপ হয়ে থাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কাউসার আহমেদ সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারিনি। সম্প্রতি কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। যাতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বদরুন্নেছা সীমা বলেন, বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য পৌরসভাকে অবহিত করা হয়েছে।