কক্সবাজারে রোহিঙ্গাসংকটের সাড়ে আট বছরের বেশি পেরিয়ে গেছে, এখনো শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন। এদিকে রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের জীবনজীবিকা, জলবায়ু, প্রাণ ও পরিবেশ, শ্রমবাজার, নিরাপত্তাসহ সবকিছুতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। রোহিঙ্গারা চাঁদাবাজি, মাদক, খুনখারাবি, অপহরণ ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত। সেখানে অপরাধপ্রবণতা বেড়েই চলেছে। এ সংকটের সমাধান না হওয়ায় স্থানীয়রা খুবই শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংস ঘটনার পর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে দুই-তিন মাসের মধ্যে ৭ লাখের অধিক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বনভূমিতে আশ্রয় নেয়। দীর্ঘ সাড়ে আট বছরের বেশি হলেও প্রত্যাবাসন হয়নি, বরং গত এক বছরে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে আগের ৩ লাখ, নতুন আসা দেড় লাখসহ বর্তমানে ১৩ লাখের অধিক রোহিঙ্গা ৩৩টি ক্যাম্পে বসবাস করছে। অতিরিক্ত মানুষের বোঝা এ অঞ্চলের জীবনযাপনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যত বিলম্ব হচ্ছে, ততই স্থানীয়দের ওপর প্রভাব বাড়ছে। উখিয়ার কুতুপালংয়ের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে দিনদিন অপরাধ বেড়েই চলেছে। কারণ এরা চাঁদাবাজি, মাদক, খুনখারাবি, অপহরণ, ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িত। এদের কারণে স্থানীয়রাও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এর প্রবণতা বেড়েই চলেছে। এদের কারণে স্থানীয়রা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘাতও ঘটছে।’ স্থানীরা বলছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ায় তারা খুবই শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। রোহিঙ্গাদের কারণে জীবনজীবিকা, জলবায়ু, প্রাণ ও পরিবেশ, শ্রমবাজার, নিরাপত্তাসহ সবকিছুতে তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এদিকে প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাসংকট নিয়ে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। সম্প্রতি কক্সবাজারে এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন। মিজানুর রহমান বলেন, ‘আট বছর ধরে সরকার রোহিঙ্গাসংকট নিরসনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এক বছরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুবার ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও এ সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করে। পরে কয়েক দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিলেও একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত যায়নি।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সভাপতি মোহাম্মদ জুবাইর বলেন, ‘বিদেশে থাকা কিছু বিত্তশালী রোহিঙ্গা অর্থের লোভে নানাভাবে একটি দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমরা চাই ক্যাম্পে বসবাসকারী প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কথা বলা হোক।’ একই সংগঠনের সহসভাপতি মোহাম্মদ তৈয়ব বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের বিষয় উঠে এলেই শুরু হয় এসব দালালের অপতৎপরতা।’