চলতি বছরের ১৯ নভেম্বর দিনাজপুর শহরের মির্জাপুরে চিকিৎসক ইতালিয় ধর্মজাযক পিয়েরো পারলারীকে হত্যা চেষ্ঠার পর ৩০ নভেম্বর চিরিরবন্দরের রানীবন্দর এলাকায় এক ইসকন ভক্ত হোমিও চিকিৎসককে গুলি করে হত্যার চেষ্ঠা করা হয়। এর ৫ দিনের মাথায় গত ৫ ডিসেম্বর কাহারোলের ঐতিহাসিক কান্তজিউ রাশ মেলায় ককটেল বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ৬ জন আহত হয়। এসব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ফের কাহারোলে ধর্মসভায় বোমা হামলা ও গুলি বর্ষণের ঘটনায় আতঙ্কিত দিনাজপুরবাসী।
ধর্মসভায় বোমা হামলার প্রতিবাদে ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবিতে গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে ইসকন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ডাবোর ইউপির জয়নন্দ ডহচি গ্রামে ইসকন মন্দিরে ধর্মসভা চলাকালীন সময়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে গুলি ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
গুলিবিদ্ধরা হলেন- জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার ইশানিয়া গ্রামের বিপতি চন্দ্র রায়ে পুত্র রঞ্জিত চন্দ্র রায় (৪৫) এবং মিঠুন চন্দ্র রায় কাহারোল উপজেলার ডাবোর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের দিজেন চন্দ্র রায়ের পুত্র মিঠুন চন্দ্র রায় (২৫)। এর মধ্যে আহত মিঠুন চন্দ্র রায়কে রাতেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন আটক শরিফুল ইসলামকে (২০) রাতেই পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্থানীয় জনতা। আটক শরিফুল ইসলাম গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার শওকত আলীর ছেলে এবং বগুড়ার একটি বেসরকারী পলিটেক্যানিকেল কলেজের ছাত্র।
এদিকে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুজন সরকার সাংবাদিকদের জানান, মন্দিরে হামলায় অংশ নেওয়া অপর সন্দেহভাজন যুবককে শুক্রবার সকালে বীরগঞ্জ উপজেলার ভোগনগর ইউনিয়নের সিংড়া শালবন এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা আটক করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করেছে। তাকে দিনাজপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আনা হয়। তার কাছে থেকে একটি পিস্তল ও কয়েক রাউন্ড গুলি পাওয়া গেছে বলে জানান এএসপি।
আটক এই যুবকের নাম মোসাদ্দের হোসেন (২২)। সে লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার বানভাসা গ্রামের তহশিলদার মানিক খন্দকারের পুত্র। সে রংপুর বেসরকারী পলিটেক্যাল কলেজ আর সি আই টি‘র প্রথম বর্ষের ছাত্র।
শুক্রবার ভোরে বীরগঞ্জ উপজেলার ভোগনগর ইউনিয়নের সিংড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সিরাজ উদ্দিনের বাসায় ওই অজ্ঞাত যুবক আশ্রয় নিতে আসে। এতে সিরাজ উদ্দিনের সন্দেহ হলে সে বিষয়টি প্রতিবেশীদের জানায়। প্রতিবেশীরা যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় সে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। এ সময় প্রতিবেশীরা তাকে আটক করতে গেলে সে গুলি চালায়। এ সময় সিংড়া গ্রামের হাসমত আলীর পুত্র মো. রফিক ইসলাম (৩২) গুলিবিদ্ধ হয়। পরে সকাল ১১টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ যুবককে আটক করে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রফিক বলেন, মোজাম্মেল সকালে বীরগঞ্জের সিংড়া ফরেস্টে (উদ্যান) সিরাজের বাড়িতে আশ্রয় চায়। তাকে দেখে সিরাজের সন্দেহ হলে সে স্থানীয়দের খবর দেয়। এরপর স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে মোসাদ্দেরকে আটকের চেষ্টা করলে সে আমাদের দিকে গুলি করে। তখন আমার পায়ে গুলি লাগে।
রাতেই স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম এবং রুহুন আমীন ইসকন মন্দির পরিদর্শন করেছেন।
এসময় জেলা প্রশাসক প্রশাসক খায়রুল আলম বলেন, এ ঘটনায় একজনকে আটক হয়েছে। তাকে জিঙ্গাসাবাদের পরই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের আটক করা যাবে এবং ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।
বিডি-প্রতিদিন/১১ ডিসেম্বর, ২০১৫/মাহবুব