হবিগঞ্জে নিখোঁজ ৪ শিশুর সন্ধান পাওয়ায় জনমনে স্বস্থি ফিরে এসেছে। পুলিশের প্রচেষ্টায় শনিবার রাতে নিখোঁজ ৪ শিশুর সন্ধান মেলে। তবে শিশুদেরকে কেউ নিয়ে যায়নি বা এমনিতেই তারা পালায়নি। লেখাপড়ার চাপে ওই শিশুরা স্বেচ্ছায় পালিয়ে গিয়েছিল সিলেট মাজারে। উদ্দেশ্য ছিল হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারত ও মোনাজাত করলে তারা সহজেই হাফিজি পড়া শিখতে পারবে।
শিশুদের উদ্ধার অভিযানে কাজে লাগে শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশনের সিসি ক্যামেরা। এই ক্যামেরার ফুটেজ অনুসরণ করেই উদ্ধার করা হয় ৪ শিশুকে।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র রবিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে সাংবাদিকরে ব্রিফিংকালে এই তথ্য জানান। তিনি জানান, বাচ্ছারা স্বেচ্ছায় পালিয়েছিল। তবে ২৪ ঘন্টার মাঝে তাদেরকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে পারায় সকলের মাঝে স্বস্থি ফিরে এসেছে। শিশুরা শুক্রবার দুপুরে শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে পাহাড়ীকা ট্রেনে সিলেটে যায়। সেখানে শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারত শেষে মাজারেই তারা রাত্রি যাপন করে। শনিবার বিকেলে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে তানভীর রশীদ রাফি, আজহারুল ইসলাম নয়ন ও ইমতিয়াজ আহমেদ শায়েস্তাগঞ্জ এসে চলে যায় নবীগঞ্জে। আজহারুল ইসলাম নয়নের ফুফুর বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার বালিকান্দি গ্রামে চলে গিয়েছিল তারা। মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে শনিবার রাত ৯টার দিকে পুলিশের কাছে খবর আসে তারা নবীগঞ্জে রয়েছে। পরে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তবে সুহানুর রহমান তাদের সাথে না এসে চলে যায় শাহপরান (র.) এর মাজার জিয়ারত করতে। শনিবার রাত ৩টার দিকে শায়েস্তাগঞ্জ থানার এসআই মুখলেছ তাকে শাহ জালাল (র.) এর মাজার থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র জানান, শিশু বাচ্চাদের কোরআন শরীফ মুখস্ত করতে অনেক কষ্ট হয়। হুজুররা তাই তাদেরকে মারধোর করেন। আবার তাদের অবিভাবকরা যেভাবেই হোক তাদের সন্তানকে হাফেজ বানাতে চান। ফলে শিশুরা মাদ্রাস ছেড়ে পালাতে চায়। মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষকরা মারধোরের কথা স্বীকার করেছেন। এ ধরনের শারীরিক নির্যাতন নিষিদ্ধ। তবে অবিভাবকরা আইনে না গিয়ে আবারও সুযোগ দেয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করায় মুচলেকার মাধ্যমে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হুজুর নিজেও অনুতপ্ত এই ঘটনার জন্য। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রবিবার দুপুরে ৪ শিশুকে তাদের অবিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। অবিভাবকরা এসময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পুলিশের প্রতি।
প্রসঙ্গত, হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ থানার সুতাংবাজার এলাকার বাছিরগঞ্জ পূর্ব নোয়াগাঁও হাজী সুরুজ আলী সুন্নীয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র বাহুবল উপজেলার পশ্চিম শাহাপুর প্রকাশিত চারগাঁও গ্রামের আহমদ রশিদ মনুর পুত্র তানভীর রশিদ রাফি (১৩), তার ভাগিনা একই উপজেলার আব্দানারায়ন গ্রামের আব্দুল আহাদের পুত্র ইমতিয়াজ আহমেদ(১২), শায়েস্তাগঞ্জ থানার দরিয়াপুর গ্রামের আব্দুল আওয়ালের পুত্র সুহানুর রহমান (১১) ও নবীগঞ্জ উপজেলার সুজাপুর গ্রামের আব্দুল্লাহর ছেলে আজহারুল ইসলাম নয়ন (১২) শুক্রবার বিকেলে পাঞ্জাবী তৈরি করার কথা বলে মাদ্রাসা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ আসে। রাতে আর তারা না ফিরলে মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মোজাক্কির হোসাইন মোবাইল ফোনে ছাত্রদের অভিভাবকদের বিষয়টি জানান। রাতে প্রত্যেক অভিভাবক সম্ভাব্য সকল স্থানে শিশুদের খোঁজ করে। শিশুদের সন্ধান না পেয়ে শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নিখোঁজ শিশু রাফি'র পিতা বাহুবল উপজেলা খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক আহমদ রশিদ মনু শায়েস্তাগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন।
বিডি-প্রতিদিন/১৩ মার্চ ২০১৬/ এস আহমেদ