৫ থেকে ১১ মাসের বকেয়া বেতন এবং বৈশাখী ভাতা সহ বিভিন্ন দাবীতে বরিশাল সিটি করপোরেশনে দিনভর অবস্থান এবং বিক্ষোভ করেছে কর্মচারীরা। নিয়মিত ৫শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৫ মাসের এবং এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ৫৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১১ মাসের বেতন বকেয়া থাকায় তারা এ বিক্ষোভ করে।
মঙ্গলবার একমাসের বেতন ও বৈশাখী ভাতার চেক ব্যাংকে পাঠানোর পরেও তা বন্ধ করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কর্মচারীরা। পরে তারা করপোরেশনের সব প্রশাসনিক কক্ষে তালা ঝুলিয়ে অবিরাম বিক্ষোভ করে।
এদিকে অসুস্থতার কথা বলে বিসিসি মেয়র আহসান হাবিব কামাল গত কয়েকদিন ধরে অফিসে না আসায় আরো ক্ষদ্ধ হয়েছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। আজকের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধ করা না হলে সিটি করপোরেশন চত্ত্বরেই অবস্থান নেয়ার ঘোষনা দিয়েছে বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা।
সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করপোরেশনের নিয়মতি ৫শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নভেম্বর মাসের বেতনের চেক জনতা ব্যাংক কর্পোরেট শাখায় পাঠিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ৫৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বকেয়া ১১ মাসের মধ্যে ৫ মাসের বেতনের চেকও ব্যাংকে পাঠানো হয়।
এর মধ্যে মন্ত্রনালয় থেকে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ৫৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন স্থগিতের নির্দেশ আসে করপোরেশনে। মন্ত্রনালয়ের আদেশ পেয়ে সিটি করপোরেশন ৫৫৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা স্থগিত করার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে।
মঙ্গলবার ৫৫৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনেকেই জনতা ব্যাংকে বেতন উত্তোলন করতে গেলে ব্যাংক টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর তারা সিটি করপোরশেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তাদের বেতন স্থগিতের কৈফিয়ত চায়। এরমধ্যে তাদের সাথে যোগ দেয় নিয়মিত ৫শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এই সুযোগে দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকরা তাদের ১ মাসের বকেয়া বেতন নিতে আসে সিটি করপোরশেনে। এ খবর পেয়ে অনিয়মিত প্রায় ২শ’ শ্রমিক তাদের বেতন বৈষম্য দূর করার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দাবী জানায়। এভাবে চতুমুর্খি দাবী দাওয়া উত্থাপিত করা হলে সিটি করপোরেশনে বিচ্ছৃংখলার সৃস্টি হয়।
বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা সকল প্রশাসনিক কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এতে সিটি করপোরেশনের সকল দাপ্তরিক কাজ কর্ম স্থবির হয়ে পড়ে। এ সময় নগর ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
পরবর্তীতে করপোরেশনের সিনিয়র কাউন্সিলররা মেয়র এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আন্দোলনকারী শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকল যৌক্তিক দাবী পূরনের আশ্বাস দিলে দুপুরের পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকদের বেতন-ভাতার জন্য প্রতি মাসে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে প্রতিমাসে রাজস্ব আদায় হয় ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা। এ কারনে বিশাল ঘাটতির সৃস্টি হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারের বর্ধিত বেতন সমন্বয় করতে গিয়ে আরো চাপে পড়তে হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য করপোরেশনের রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকরা ভাল থাকুন, তাদের বেতন বকেয়া না থাকুক তিনিও সেটা চান। তাই সকলের সমন্বয়ে এই সমস্যা সমাধানের চেস্টা চলছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১২ এপ্রিল, ২০১৬/ হিমেল-১৭