রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বৈসাবির মূল আনুষ্ঠানিকতা। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফান্ডেশনের উদ্যোগে শহরের গর্জনতলী এলাকায় ত্রিপুরা পল্লীর ঘাটে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানো হয়।
ফুল ভাসিয়ে উৎসবের সূচনা করেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি পৌর মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধূরী, জেলা পরিষদের সদস্য স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা, অমিত চাকমা রাজু, ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেসনের সাধরাণ সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরা প্রমুখ।
ভোরে আকাশে সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণী, শিশু, কিশোর-কিশোরীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে কলাপাতায় ফুল হাতে নিয়ে সাড়ি বেধে কাপ্তাই হ্রদে গঙ্গাদেবীকে সাক্ষী রেখে সৃষ্টিকর্তার কাছে পৃথিবীর সর্বজীবের সুখ ও শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করে। পরে ফুল ভাসিয়ে উৎসবে মেতে ওঠে। এপর শুরু হয় ফুল বিজুর আনুষ্ঠানিকতা। পাড়ায় পাড়ায় নাচে গানে মেতে উঠে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের জনপ্রিয় গড়াই নৃত্য, ঘিলা কেলা, বোতল নাচসহ নানা সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে পাহাড়ি জনপদ। আর আগাম প্রস্তুতি শুরু হয় বৈাসবি ও বর্ষবরণের।
জানা গেছে, এবার রাঙামাটি শহরে রাজবন বিহার ঘাট ছাড়াও রাজবাড়ি ঘাট, সমতাঘাট, গর্জনতলী, তবলছড়ি, রাঙাপানি, আসামবস্তীসহ বিভিন্ন স্থানে পৃথকভাবে ফুল ভাসানো হয়েছে। এছাড়া তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে নদীতে ফুল ভাসানো উৎসব পালিত হয়েছে। অন্যদিকে, ফুল বিজু উপলক্ষে রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানো উৎসবের পরে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা, বয়োজৈষ্ঠদের স্নান ও বস্ত্রদান আলোচনা সভা, সংবর্ধনা, পুরস্কার বিতরণ আয়োজন করা হয়।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের রীতি অনুযায়ী ফুল বিজুর মাধ্য দিয়ে মূল বিজু ও পহেলা বৈশাখ গোজ্যাপোজ্যার সুচনা করা হয়।
বুধবার উদযাপিত হবে মূল বিজু। এদিন পাহাড়ের ঘরে ঘরে আয়োজন করা হয় ঐতিহ্যবাহী রকমারি ও মুখরোচক খাবারের। সাধ্যমতো ঘরে ঘরে পরিবেশন করা হবে রকমারি খাবার। উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে উঠে সবাই। এ সময় চাকমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা গেংখুলী আসর ও বাঁশ নৃত্য ছাড়াও মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা জলকেলি এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা গড়াইয়া নৃত্য উৎসবে মেতে উঠেছে। এরপর উদযাপিত হবে পূণ্যকর্ম সম্পাদনের মহোৎসব গোজ্যাপোজ্যা দিন। পাশাপাশি পার্বত্যাঞ্চলে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে উদযাপিত হবে বর্ণিল কর্মসূচিও।
বিডি-প্রতিদিন/ ১২ এপ্রিল, ২০১৬/ রশিদা