ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠী গ্রামে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে এক স্কুল ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই গ্রাম জুড়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তোলপাড় চলছে। তবে ধর্ষণে জড়িত প্রভাবশালী মহলের ভয়ে সরাসরি কেউ মুখ খুলছেন না। এমনকি ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজনও প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করছে না।
তবে এ ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনে ঝালকাঠি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঝালকাঠির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদ হাসান জানান, তিনি একাধিকবার বিনয়কাঠী গ্রামে গিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কেউ কথা বলছেন না। তবে পুলিশের একাধিক সোর্স ওই গ্রামে নিয়োজিত করা হয়েছে। যদি পাশবিক নির্যাতন কিংবা কারো প্ররোচনায় ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে থাকে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আ. রাবিব বলেন, সাংবাদিকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে সদর থানার ওসি মাহে আলম ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। বুধবার আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাব। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে রাজি হচ্ছে না কেউ।
আত্মহত্যাকারী ছাত্রী বিনয়কাঠী গ্রামের দিনমজুর মোজ্জাম্মেল হকের মেয়ে লাবনী আক্তার প্রিয়া। সে সুগন্ধিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (৮ এপ্রিল) রাতে চাচার ঘর থেকে খাবার খেয়ে লাবনী নিজেদের ঘরে ফেরার সময় চাচাতো ভগ্নিপতি স্বপন খান লাবনীকে একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করে। এ ঘটনা দেখে ফেলে স্থানীয় মোড়লের পুত্র বখাটে সুমন, রসুলের পুত্র হুমায়ূন, গনি সরদারের পুত্র ফোরকান, ছালাম সরদারের পুত্র বাবু ওরফে হৃদয়। এক পর্যায়ে তারাও প্রিয়াকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে এরাই প্রিয়াকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য শাসিয়ে যায়। রাতেই ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে লোকলজ্জার ভয়ে লাবনী বিষ পান করে। পরদিন শনিবার সকালে গুরুতর অবস্থায় লাবনীকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে দুপুর ১২টায় তার মৃত্যু ঘটে। ঘটনা প্রসঙ্গে লাবনীর বাবা মোজাম্মেল হক মুখ খুলছেন না। তবে লাবনীর ফুফু মালা বেগম অভিযোগ করেন, স্বপন খান জোর করে ৫ বছর আগে তার বড় ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করে। স্বপনের অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল না। এ কারণে প্রতিশোধ নিতেই হয়ত স্বপন পরিকল্পিতভাবে লাবনীর শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছে।
এদিকে শুক্রবার রাত থেকে স্ত্রীকে নিয়ে পলাতক রয়েছে স্বপন ও অন্য অভিযুক্তরা। মুঠোফোনে কাউকে না পাওয়ায় কারও বক্তব্য জানা যায়নি। ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহে আলম জানান, চাচাতো ভগ্নিপতি স্বপনের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় লাবনীকে স্থানীয় লোকজন আটক করেছে এমন খবরের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে স্বপন জোর করে লাবনীর শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছে নাকি দু'জনের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক ছিল সে বিষয়টি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। ওসি জানান, লাবনীর পরিবার থেকে অভিযোগ দেওয়া হলে মামলা নেওয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/১২ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ