বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ক্যাম্পের গহীন অরণ্যের আব্দুল্লার ছিলা নামক এলাকায় পরিকল্পিত ভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো বন সন্নিহিত লোকালয়ের সংঘবদ্ধ ৬ আপরাধী। সুন্দরবন বিভাগ এসব অপরাধীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হলেও শনিবার দুপুর পর্যন্ত তাদের নামে কোন মামলা হয়নি।
তবে সুন্দরবন বিভাগ বলছে, ‘ব্যক্তি স্বার্থে সুন্দরবনে আগুন লাগানো হয়’ এমন অভিযোগে ৬ অপরাধীর নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে রবিবার বাগেরহাট আদালতে মামলা দায়ের করা হবে। ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বাদী হয়ে বন আইনে আদালতে মামলাটি দাখিল করবেন।
এনিয়ে গত ১৪ বছরে ২০ বার ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও এই প্রথম অপরাধীদের সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনে মঙ্গলবার রাতে ‘আব্দুল্লার ছিলা’ এলাকার পরিকল্পিত ভাবে ধরিয়ে দেয়া আগুন ফায়ার সার্ভিসের ৩ টি ইউনিট বৃহস্পতিবার রাতে নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে সুন্দরবনের ৮ দশমিক ৫৫ একর বনাঞ্চল সম্পূর্ন পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
আরো ৬৬ একর বনাঞ্চলসহ জীববৈচিত্র্যের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির জিপিএস ডিভাইসের মাধ্যমে সুন্দরবন বিভাগ পুড়ে যাওয়া বনাঞ্চলের এই হিসাব বের করেছে। এই ঘটনার মাত্র ১৭ দিন আগে নাংলি ক্যাম্প এলাকায় আরো একটি আগুনের ঘটনায় পুড়ে যায় প্রায় এক একর বনভূমি।
চলতি বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে, ‘কথিত লীজ’ নেয়া সুন্দরবনের বিলে মাছ ধরার সুবিধার্থে ওই এলাকায় পরিকল্পিত ভাবে আগুন দেয়া হয়েছিল এমন অভিযোগে ১৯২৭ সালের বন আইনের ২৬ এর ১ক (গ) ধারায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে রবিবার বাগেরহাট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হবে।
যাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে তারা সবাই বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বাসিন্দা। বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার সুবিধার্থেই নিজেরা লাভবার হতে পরিকল্পিত ভাবে সুন্দরবনে আগুন দেয় তারা। মামলার প্রধান আসামি শাহজাহন শিকারীর বাড়িও সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটে শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের ভোলা নদীর পাড়ে।
এদিকে সুন্দরবন বিভাগ আগুনের ঘটনা তদন্তে গঠিত তিন সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েতকে এই তদন্ত কমিটির প্রধান করায় নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ তদন্ত নিয়ে সুন্দরবন সন্নিহিত লোকালয়ের মানুষের মনে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
কয়েকটি অসাধু মৎস্য শিকারি চক্র প্রতিবছর বনে আগুন লাগিয়ে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে তারা আগুন লাগিয়ে বন পরিষ্কার করে মাছের বিল তৈরী করে। বর্ষা এলেই শুরু হয় ওই চক্রের মাছ ধরার উৎসব। বন কর্মকর্তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই চক্রের কাছে মৌসুম ভিত্তিক অলিখিত ইজারা (লিজ) দেয় ওই বিলগুলো। কারেন্ট জাল পেতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করা হয়।
প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ টাকা আয় হলেও সরকারের ঘরে একটি টাকাও রাজস্ব জমা পড়ে না। পকেট ভারি হয় সুন্দরবনের কর্মকর্তাদের। মঙ্গলবার রাতের আব্দুল্লারছিলা নামক বনে আগুনের ঘটনাটি তারই অংশ।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ এপ্রিল ২০১৬/ হিমেল-১০