ঢাবি'র মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা আসিফের (২১) মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে মুন্সীগঞ্জ। মৃত্যুর তিন দিন পার হলেও এ ঘটনায় দায়ী কাউকে গ্রেফতার না করায় মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগ। এ সময় সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা জানান, গত ১২ এপ্রিল রাতের আঁধারে ঢাবির মেধাবী ছাত্র আসিফকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। তারাই আবার আসিফকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। অজ্ঞাত কারণে হামলাকারীদের গ্রেফতার না করে উল্টো মামলা দিয়ে আহত আসিফকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। গত রবিবার সকালে আসিফ সু-চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয়রা। সেদিন থেকে দফায় দফায় এলাকাবাসি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে। আসিফের মৃত্যুতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসির দায়িত্বহীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনের সড়ক অবরোধ করে ছাত্রজনতা। এ সময় জেলা ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা কর্মীরা শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে শহরের ব্যস্ত এই সড়কটিতে যান চলাচল প্রায় আধা ঘন্টা বন্ধ থাকে। এ সময় জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল মৃধার নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুরুজ মিয়া, শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নসিবুল ইসলাম নোভেল, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সাগর প্রমুখ। এ সময় বক্তারা দাবি করেন ছাত্রলীগ নেতা আসিফকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের সাথে যারাই জড়িত তাদের গ্রেফতারসহ বিচারের আওতায় আনা না হলে কঠোর আন্দোলনে নামবে ছাত্রলীগ। ছয় উপজেলায় একযোগে ওই আন্দোলন পালন করা হবে।
এদিকে কোলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আসিফ হাওলাদারের মৃত্যুর তিনদিনেও কোন আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মত সিরাজদিখানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা ছাত্রলীগ। সিরাজদিখান উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈকত মাহমুদের নেতৃত্বে মিছিলটি হয়। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া সকাল ১০টার দিকে বিক্ষোভ করেছে গজারিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ। এসময় তারা কিছুক্ষণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে যানজটের সৃষ্টি হলে পুলিশের হস্তক্ষেপে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গজারিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। গজারিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান সাগর তার বক্তৃতায় বলেন, কারাগারে ছাত্রলীগ সভাপতি আসিফ হাওলাদারের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত করতে হবে। তদন্তে যদি কারো গাফলতি ধরা পড়ে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
এ দিকে আসিফের চাচা ডা. আবুল খায়ের জানান, আসিফকে গত ১২ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে কোলা গ্রামের রাস্তায় একা পেয়ে স্থানীয় এমপি সুকুমার রঞ্জনের ঘন্ষ্টি ইয়ামিন গং এলোপাথারি পিটিয়ে আহত করে। পরে পুলিশকে 'ম্যানেজ' করে অন্যায়ভাবে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তার চিকিৎসার জন্য সিরাজদিখান থানার ওসিকে বলা হলেও তিনি চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে মারাত্মক আহতাবস্থায় আসিফের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। ওসি এ গাফিলতি না করলে আসিফ মারা যেত না।
উল্লেখ্য, ইউপি নির্বাচনের জেরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় ১২ এপ্রিল মারাত্মক আহত হয় আসিফ। এরপর পুলিশের এক মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত রবিবার কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানেই তিনি মারা যান।
সিরাজদিখান থানার ওসি ইয়ার দৌস হাসান জানান, আসিফের বাবা হাবিবুর রহমান বাদি হয়ে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/১৯ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ