ঝালকাঠির নলছিটিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে বাল্যবিয়ে থেকে রেহাই পেল মহব্বত আলী স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী মেরিনা আক্তার (১৩)। রবিবার সকালে উপজেলার রানাপাশা ইউনিয়নের দক্ষিণ রানাপাশা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অধ্যক্ষ শাহনাজ পারভীন জানিয়েছেন। বাল্য বিবাহ ঠেকাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এ ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
জানা গেছে, গত শনিবার রাতে নলবুনিয়া গ্রামের দিনমজুর আ. রাজ্জাক হাওলাদারের কন্যা মেরিনা আক্তারকে (১৩) বিয়ের উদ্দেশ্যে দেখতে আসে বরপক্ষ। কনে পছন্দ হলে একই গ্রামের আ. রব সিকদারের পুত্র মো. রিয়াজ সিকদার(৩২) আংটি পরিয়ে দেয়। এরপর রাতেই কাজী ডেকে বিয়ের আয়োজন করে কনের পরিবার। এ সময় এলাকার সচেতন কয়েক ব্যক্তি বিবাহ রেজিষ্টার কাজী আ. রাজ্জাক আকনের কাছে সরকারি আইন অমান্য করে বিবাহ পড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে ওই বাড়ি থেকে সটকে পড়েন।
এ অবস্থায় বর-কনের পরিবার অন্য কাজী ডেকে পরের দিন রবিবার সকালে পুনরায় কাবিন-রেজিষ্ট্রির উদ্যোগ নেয়। এ খবরে উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ শাহনাজ পারভীনের নেতৃত্বে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিয়ে বাড়িতে এসে মেরিনার বাবা-মায়ের সাথে আলাচনা করে বাল্য বিয়ে না দেয়ার পরামর্শ দেয় ও তাকে লেখাপড়ার করানোর আহ্বান জানায়।
তারা মেরিনার জন্য সরকারি সকল সাহায্য সহযোগিতায় ও বিনা খরচে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। অন্যদিকে মেরিনার বাড়িতে অবস্থানরত ছাত্র-ছাত্রীরা 'বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করি, নতুন ভাবে জীবন গড়ি' বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন। এসময় সহপাঠি, অন্যান্য শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের উপস্থিতি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে নাবালিকা স্কুলছাত্রী মেরিনা। বাল্য বিবাহের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়ে যায়।
এ বিষয়ে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ''আমরা প্রতি মাসে জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষকদের সাথে বাল্য বিয়ে, যৌতুকসহ নানা সামাজিক অপরাধ কর্মের বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালা করে আসছি। এর ফলে সামজিক পর্যায়ে তার প্রতিফলন ঘটছে ও আমরা তার বাস্তবায়নের সুফল পাচ্ছি। এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাল্যবিয়েসহ অনেক সামাজিক অপরাধের প্রতিরোধ সম্ভব হবে।''
বিডি-প্রতিদিন/২৪ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ