ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বাইরে থেকে অনেক সুন্দর ও নিরাপদ চিকিৎসাস্থল মনে হলেও চিকিৎসা নিতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয় রোগী ও তার স্বজনদের।
প্রায় সাড়ে ৪ লাখ অধিবাসীর স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি মহাসড়ক ও সংযোগ সড়কগুলোতে দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা সেবাস্থল এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আর ব্যস্ততম এ কমপ্লেক্সটিতে নেই কোন সরকারী এ্যাম্বুলেন্স। জরুরী সেবার জন্য নেই সাকার মেশিন, নষ্ট হয়ে পড়ে আছে এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসোনোগ্রাফী মেশিন ও প্যাথলজী বিভাগের এনালাইজার।
আবার পদ থাকলেও নেই মেডিসিন, সার্জারী, নাক কান গলা বিভাগের কোন চিকিৎসক। ৮৪ জন স্বাস্থ্য সহকারীর মধ্যে ৩৪টি পদই শূন্য রয়েছে, সংকট রয়েছে ঝাড়ুদার ও দারোয়ানের। এছাড়া চিকিৎসকদের সময়মতো চেম্বারে না আসা ও কর্মস্থলে সঠিকভাবে ডিউটি পালন না করায় বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদেরকে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। নানামুখী সংকটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন নিজেই স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী চৌদ্দগ্রামের একটি জনসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোঃ নাসিম চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স দেয়ার ঘোষণা দিলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। এ্যাম্বুলেন্স না থাকার কারণে এলাকার সাধারন রোগী ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা কবলিত রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরী ভিত্তিতে কুমিল্লা পাঠাতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগীর স্বজনদের। আর এ সুযোগটি ব্যবহার করে নিচ্ছেন হাসপাতালের সামনে অবস্থিত রেন্ট-এ কার ও প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স মালিকরা।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের প্রচন্ড ভীড় ও ডাক্তারদের প্রতিটি চেম্বারের সামনে উঠতি বয়সের ৩-৪ জন করে যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারা বিভিন্ন ক্লিনিক বা হাসপাতালের প্রতিনিধি। রোগীর ভীড়ে ডাক্তারদের চেম্বারের ঢুকতে গিয়ে এসব যুবকদের হাতে অনেক নারী, কিশোরী যৌন হয়রানির শিকার হলেও ভয়ে নিরবে সহ্য করে চলে যাচ্ছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ডাক্তার ও কর্মচারী জানান।
তারা আরও জানান, হাসপাতলের ভিতরেই রয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডা। মাদকসেবীরা ক্লিনিক বা হাসপাতালের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে ভাল ডাক্তার দেখানো, এক্স-রে, প্যাথলজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করানোর কথা বলে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা সহজ-সরল মহিলা রোগীদের হাসপাতাল থেকে বাইরে নিয়ে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
এদিকে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা গেছে, রোগীদের ব্যবহৃত টয়লেট ও ওয়ার্ডের-ফ্লোরও রয়েছে অপরিষ্কার। এছাড়া রয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডার, বিছানা বালিস ও মশারি সংকট। কর্তব্যরত চিকিৎসক কর্মস্থলে না থেকেও ডিউটি পালন করে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ডাঃ মশিউর রহমান মামুন। ডিউটির রোষ্টার অনুযায়ী জরুরী বিভাগে একজন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করার নিয়ম থাকলেও তিনি তার তোয়াক্কা করেন না।
ডাঃ মামুনের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি স্বীকার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নাসির উদ্দিন বলেন, পর পর দুটি সভায় এ বিষয়ে ডাঃ মামুনের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জরুরী প্রসুতিসেবা সেন্টার (ইউসি) হিসেবে এ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটি স্বীকৃতি না থাকলেও গত ৫ মাসে অন্তত ৩০টি সিজার ও ১৫০টি নরমাল ডেলিভারী করা হয়েছে। ডিমান্ড সাইট ফ্রিনান্সি স্কীম (ডিএসএফ) কর্মসূচির অন্তভূক্ত করা হলে এ সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া এ্যাম্বুলেন্স ও এক্সরেসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির জন্য কুমিল্লার সিভিল সার্জন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার পত্র প্রেরন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বিডি প্রতিদিনি/ ০১ জুন ২০১৬/ হিমেল-১১