বরিশালের মুলাদী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও আঞ্চলিক দৈনিক মতবাদের স্থানীয় প্রতিনিধি মনির হোসেন রাড়ি হত্যা মামলার রায়ে প্রধান আসামী আলাউদ্দিন রাড়ি ও তার ছেলে রাসেল রাড়িকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
একই মামলায় অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় আসামী আলাউদ্দিন রাড়ির অপর ছেলে সোহাগ রাড়িকে বেকসুর খালাশের আদেশ দেয়া হয়েছে।
বরিশালের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সুদীপ্ত দাস মঙ্গলবার সকালে আসামীদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।
মামলার বিবরনী থেকে জানা যায়, নিহত সাংবাদিক মনির ছিলেন সবার কাছে গ্রহনযোগ্য এবং ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। তিনি মুলাদী পৌরসভা নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছিলেন। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দলিল উদ্দিন মাষ্টার ও মো. আনোয়ারদের বাড়ির চলাচলের পথ বন্ধ করে সীমানা প্রাচীর নির্মান করছিলো আলাউদ্দিন রাড়ি ও তার ছেলেরা। ভুক্তভোগীরা বিষয়টি প্রতিবেশী সাংবাদিক মনিরকে জানালে তিনি ওইদিন বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবেশীদের চলাচলের পথ বন্ধ করে সীমানা প্রাচীর নির্মান না করতে আলাউদ্দিন রাড়িসহ তার ছেলেদের অনুরোধ করে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সাংবাদিক মনিরকে ইট কাটার ডাইস দিয়ে কুপিয়ে এবং কোদাল দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে আসামীরা। আশংকাজনক অবস্থায় ওইদিন রাতে তাকে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেলে আনা হলে চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করেন। ঢাকা নেয়ার পথে ওইদিন রাত ১টার দিকে কাওড়াকান্দি ফেরীঘাটে সাংবাদিক মনির মারা যায়।
এ ঘটনায় ২২ ডিসেম্বর মনিরের ভাই জসিমউদ্দিন রাড়ি বাদি হয়ে আলাউদ্দিন রাড়ি ও তার দুই ছেলে রাসেল রাড়ি ও সোহাগ রাড়ি, স্ত্রী আলেয়া বেগম এবং প্রতিবেশী মোতালেব রাড়িকে অভিযুক্ত করে মুলাদী থানায় মামলা দায়ের করেন। ২০১১ সালের ১৭ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. কায়কোবাদ ৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০১৪ সালের ২ জুলাই আসামী মোতালেব মারা যায়। ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী আলেয়া বেগমকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে এবং আলাউদ্দিন ও তার দুই ছেলে রাসেল ও সোহাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত। পরে ২২ জনের মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্য, শুনানী এবং যুক্তিতর্ক গ্রহন শেষে আদালত গতকাল ওই রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে মামলার বাদি জসিমউদ্দিন খুশী হলেও এক আসামী খালাশ পাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চাদালতে আপীল করার কথা জানিয়েছেন নিহতের স্ত্রী হামিদা বেগম। তবে জেলার সরকারী কৌসুলী অ্যাডভোকেট গিয়াসউদ্দিন কাবুল এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন।
আসামীপক্ষের কাউকে পাওয়া না গেলেও মুঠোফোনে তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোকলেসুর রহমান জানিয়েছেন, আসামীরা ন্যায় বিচার পায়নি। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপীল করবেন।
বিডি প্রতিদিন/ ২৬ জুলাই ২০১৬/ সালাহ উদ্দীন