পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে শত শত একর তিন ফসলি জমির টপ সয়েল বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় ইট ভাটাগুলো ইট তৈরির জন্য মাটির উপরিভাগের এই টপ সয়েল কিনে নিচ্ছে। টপ সয়েল কেনা বেচায় গড়ে উঠেছে একশ্রেণির দালাল চক্র। মূলত কৃষকদের অসচেতনতা এবং অভাব অনটন কে পুঁজি করে এই দালাল চক্র মাটি কেনা বেচার ব্যবসা করছেন। এতে এই এলাকার তিন ফসলি জমিগুলো উর্বরতা হারাচ্ছে।
মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞদের মতে, জমির মূল উর্বরা শক্তি থাকে জমির উপরি ভাগে। উপরি ভাগের মাটি নিয়ে যাওয়ার কারণে জমি যে উর্বরা শক্তি হারায় তা পূরণ হতে আট থেকে দশ বছর লেগে যেতে পারে। এছাড়াও উপরিভাগ কেটে নেয়ার ফলে প্রতি বছর জমি নিচু হয়ে যাচ্ছে। তাই অতিরিক্ত পানি জমে থাকার কারণে জমিগুলো আবাদের যোগ্যতাও হারাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার পর পরই ফসলি জমির মাটি বিক্রি শুরু হয়। উপজেলার প্রায় ১০ টি ভাটার মালিকরা ইট তৈরির মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই দালালদের লাগিয়ে দেয় মাটি সংগ্রহের কাজে।
এই দালালরা কৃষকদের কাছে প্রতি ভ্যান মাটি কেনে ২শ' থেকে আড়াইশ' টাকা। পরে তারা ইট ভাটার মালিকদের কাছে উচ্চমূল্যে তা বিক্রি করে। ইট ভাটা ছাড়াও প্রতিবছর গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ ও মেরামতের নামে বিনামূল্যে ফসলি জমির এই টপ সয়েল কেটে নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন বাসা বাড়িতে এ ধরনের মাটির চাহিদাও রয়েছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, যে সব জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলা হয়েছে সে সব জমিতে বর্ষা মৌসুমে পানি জমে থাকে। উর্বরা শক্তি হারিয়েফেলায় ভাল আবাদ হয়না।
সদর ইউনিয়নের সবুজ পাড়া গ্রামের কৃষক মানিক হোসেন জানান, 'এই এলাকার জমিতে বছরে তিনটি আবাদ করি। উপরি ভাগের মাটি কেটে নেয়ায় জমিতে এখন ভাল ফসল হয়না।’
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ–আল-মামুন বলেন, মাটির উপরিভাগের এক ফুটের মধ্যে জমির উর্বরা শক্তি থাকে। যে কারণেই হোক এই মাটি কেটে নেয়া হলে ঐ জমির সমস্ত উর্বরা শক্তি চলে যায়, যা পূরণ হতে সময় লাগে প্রায় ১০বছর। তিনি আরও বলেন, আবাদি জমির মাটি কাটার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন আইন না থাকায় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।এ অবস্থায় জমির মালিক গনের সচেতন করাই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ। বর্তমানে যে হারে উপজেলায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কাটা শুরু হয়েছে তা অবিলম্বে বন্ধ করা না গেলে এই উপজেলায় কৃষি উৎপাদন কমে যাবে।
বিডি প্রতিদিন/ ৩০ আগস্ট ২০১৬/ সালাহ উদ্দীন