চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ শ্যামলী (২২) হত্যা মামলার প্রধান আসামি স্বামী মাইনুল ইসলামকে (৩৫) অবশেষে সোমবার গভীর রাতে গ্রেফতার করেছে সিআইডি পুলিশ।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আলীনগর মুন্সীপাড়ার মো. বাবলু আলীর দ্বিতীয় মেয়ে শ্যামলী খাতুনের (২২) সাথে সদর উপজেলার বারঘরিয়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর হুগলীপাড়া গ্রামের মোখলেসুরের ছেলে মো. মাইনুল ইসলামের বিয়ে হয়। তাদের পাঁচ বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। কিন্তু প্রায় ছয় মাস আগে মাইনুল ইসলাম প্রথম স্ত্রী শ্যামলী খাতুনের অনুমতি না নিয়েই শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হলে মাইনুল প্রায়ই শ্যামলীর ওপর নির্যাতন চালাতো এবং তার পিতার কাছ থকে যৌতুক হিসেবে তিন লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু ৪ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা শ্যামলী স্বামীর এই দাবি মেনে না নেওয়ায় তার ওপর নেমে আসে আরও নির্মম নির্যাতন। এরই জের ধরে গত ২৯ মে রাতে মাইনুল শ্যামলীকে বেধড়ক পেটাতে থাকে এবং এক পর্যায়ে গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে। এরপর মাইনুল স্বপরিবারে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। কিন্তু মৃত শ্যামলীর শরীরের বিভিন্ন অংশে এবং গলায় আগাতের চিহ্ন দেখতে পাওয়া গেলেও রহস্যজনক কারণে সদর মডেল থানা পুলিশ হত্যা মামলা না নিয়ে আত্মহত্যা (ইউডি) মামলা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে মৃত গৃবধূ শ্যামলীর মা আলেয়া বেগম হত্যা মামলা দায়েরের জন্য সদর মডেল থানার ওসির কাছে বার বার ধর্ণা দিলেও ওসি হত্যা মামলা গ্রহণ বা পলাতক স্বামী মাইনুলকে গ্রেফতারের কোন উদ্যোগ নেননি।
বাধ্য হয়ে মৃত গৃহবধূ শ্যামলীর মা আলেয়া বেগম গত ৯ জুন বাদী হয়ে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের 'ক' অঞ্চলের বিচারক জুয়েল অধিকারীর আদালতে জামাই মাইনুল ইসলামসহ সাত জনকে আসামি করে অভিযোগ দায়ের করলে আদালত হত্যা মামলা গ্রহণ করার জন্য সদর মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশ অমান্য করে দীর্ঘ একমাস মামলা রেকর্ড করেননি ওসি।
ইতোমধ্যে শ্যামলীকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসলে তৎকালীন পুলিশ সুপার বশির আহম্মদের নির্দেশে গত ১৯ জুলাই হত্যা মামলাটি রেকর্ড করতে বাধ্য হন ওসি। কিন্তু আসামিদের গ্রেফতার করা নিয়ে আবারও টালবাহানা শুরু করে পুলিশ। এই মামলা সম্পর্কে থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলার বাদী আলেয়া বেগম পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করলে পুলিশ সুপার টি.এম মোজাহিদুল ইসলাম মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পড়ে রাজশাহীর সিআইডির পরিদর্শক মো. শাহিন আখন্দের ওপর। মামলার তদন্তভার পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহিন আখন্দ গত সোমবার গভীর রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের একটি বাড়ি থেকে পলাতক প্রধান আসামি মাইনুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার সিআইডি পুলিশ গ্রেফতারকৃত মাইনুলকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহিন আখন্দ জানান।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ