ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় আকস্মিক বন্যায় চরম বিপাকে পড়েছেন পাবনার তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও তলিয়ে গেছে লক্ষাধিক একর জমির রবিশস্য ও মৌসুমী সবজি ক্ষেত। রাত জেগে বাঁধ তৈরি করে ফসল বাঁচানোর চেষ্টা করেও রেহাই পাচ্ছেন না কৃষকেরা।।
একই সঙ্গে নদী ভাঙনে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কবলিত পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা ও সাঁড়া ইউনিয়নের ৪ গ্রাম এবং সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
আজ বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বৃদ্ধি না পেলেও স্থিতিশীল অবস্থায় থাকলেও দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যা কবলিত মানুষের।
সম্প্রতি ভারতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কারণে ফারাক্কা বাঁধের প্রায় ১০০ গেট খুলে দেয়। এতে পাবনা জেলার পদ্মা পাড়ের ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা, দাদাপুর সাড়া ইউনিয়নের মাঝদিয়া, ছোট মাঝদিয়া, আরামবাড়িয়া, সাড়া গ্রামে এবং সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের উদয়পুর, ইন্দ্রজিৎপুর, মালফিয়া ও কামারহাট গ্রামে গত কয়েক দিনে অন্তত ৫০ বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রানা সরদার জানান, আমার ইউনিয়নের ৫ গ্রামের লোকজন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে চরের ২ গ্রামের সব বাড়িই যুবে গেছে। অনেকেই বাড়ি ঘর ছেড়ে উঁচু এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। তারা গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী নিয়ে চরম অসুবিধায় রয়েছেন।
এদিকে, পদ্মার পানিতে জেলার পদ্মা পাড়ের ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা, দাদাপুর, পাবনা সদরের ভাড়ারা ও দোগাছি ইউনিয়নের লক্ষাধিক একর ফসলি জমি ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেতও তলিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় আকস্মিক এ বন্যায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন এসব এলাকার কৃষক। বিভিন্ন সংস্থার নিকট থেকে ঋণ নিয়ে আবাদ করায় পুঁজি হারিয়ে তারা এখন ঋনের টাকা পরিশোধের চিন্তায় দিশেহারা।
লক্ষ্মীকুণ্ডা গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, গত কয়েক দশকে আমাদের এলাকায় এ রকম বন্যা হয়নি। গত মৌসুমেও বরই বিক্রি করে আমি ৭ লাখ টাকা আয় করেছিলাম। এখন পুরো বাগানটাই পানির নিচে। পাতা পড়ে যাচ্ছে, গাছে একটি ফলও আসবে না।
চরদাদাপুর গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হোসেন জানান, সমিতি থেকে এক লাখ টাকা ঋণ করে দুই বিঘা গাজর ও ফুলকপি বুনেছিলাম। চারাও হয়েছিল। গত রাতে হঠাৎ বানের পানিতে সম্পূর্ণ ক্ষেত ডুবে গেছে। এখন সমিতির ঋণ কিভাবে শোধ করব সেই চিন্তায় আমার ঘুম হারাম।
একই এলাকার কৃষক আজম বিশ্বাস জানান, আকস্মিক বন্যায় আমাদের গ্রামের কমপক্ষে ৫০-৬০ বিঘা জমির মূলা, ফুলকপি, গাজর, ধান, আখ, বরইসহ বিভিন্ন মৌসুমী সবজি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আমরা রাত জেগে বাঁধ দিয়ে ফসল বাাঁচানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রতিদিনই আরো বেশী এলাকা পানিতে ডুবে যাচ্ছে। চলমান হারে পানি বাড়তে থাকলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে ।
বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ী, পাবনার উপ-পরিচালক বিভূতিভূষণ সরকার বলেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আমরা বিভিন্ন এলাকা জরিপ করছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতায় আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
অন্যদিকে, বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষকে আতঙ্কিত না হবার পরামর্শ দিয়ে উত্তরাঞ্চলীয় পানি পরিমাপক বিভাগের উপপরিচালক জহুরুল ইসলাম বলেন, পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার কোনো আশঙ্কাই আমরা দেখছি না। অচিরেই বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বিডি-প্রতিদিন/ ৩১ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ