বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা বাজারে অবস্থিত প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ৩৩ শতক জমি নিয়ে চার পক্ষের রশি টানাটানি চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, দু'টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এক ব্যক্তি দাবি করছেন ওই সম্পত্তির মালিকানা। পরস্পরের মধ্যে চলছে মামলা মোকদ্দমাও।
ইতোমধ্যে রায়েন্দা পাইলট হাইস্কুল এবং আর.কে.ডি.এস গার্লস হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব সম্পত্তি দাবি করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন ওই জমিতে। এ নিয়ে বিবাদী পক্ষগুলোর মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। ফলে, যে কোনো সময় ঘটতে পারে সাংঘর্ষিক ঘটনা।
অপরদিকে, মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন পরিত্যক্ত ওই জমিতে একটি আধুনিক শহীদ মিনার নির্মান করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়। কিন্তু মতবিরোধের কারণে থমকে আছে সে উদ্যোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জমির মূল মালিক খোন্তাকাটা গ্রামের মৃত মুজাহার আলী হাওলাদার। ১৯৬২ সালে তার বেশ কিছু জমি অধিগ্রহণ করে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করে সরকার। এর মধ্য থেকে ৪৭৩ দাগের ওই ৩৩ শতক জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু জমির মূল মালিক মারা যাওয়ার পর তার ওয়ারিশসহ যে যার মতো কাগজপত্র তৈরি করে ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করছেন।
রায়েন্দা পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান আহমেদ গাজী বলেন, পাইলট হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত ১৯৪৭ সালে। এই প্রতিষ্ঠানের নামে মোট ৫একর ৩৫ শতক সম্পত্তি রয়েছে। বিবাদমান ৩৩ শতক সম্পত্তির মধ্যে পাইলট হাইস্কুলের ১৮ শতক। বাকি ১৫ শতক পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এছাড়া অন্য কারও জমি নেই। কিন্তু গার্লস স্কুল কর্তৃপক্ষ গোপনে সেটেলমেন্ট অফিস থেকে রেকর্ড করিয়ে সম্পূর্ণ জমি এখন তাদের বলে দাবি করছে। দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি দাবি করছেন তার পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে।
এদিকে, গত ২৭ আগস্ট দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার ওরফে দেলোয়ার মেম্বার নামের জমির মূল মালিকের এক ওয়ারিশ ওই জমিতে রাতের অন্ধকারে একটি ঘর নির্মান করেন। পরে পাইলট স্কুলের উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা সেটি ভেঙে ফেলে। এতে দেলোয়ার হোসেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য ও এক শিক্ষকসহ পাঁচজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় রুবেল গাজী নামের একজন জেলহাজতে রয়েছেন।
তবে, দেলোয়ার হোসেন পৈত্রিকসূত্রে জমির মালিকানা দাবি করে বলেন, আমার জমি দুই স্কুল কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক দখল করতে চাইছে।
আর.কে.ডি.এস গার্লস হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আবুল হোসেন নান্টু বলেন, মুজাহার আলী হাওলাদার পুরো সম্পতিই গার্লস স্কুলের নামে দান করে গেছেন। স্কুলের নামে রেকর্ডও হয়েছে। এই জমি অন্যরা অনৈতিকভাবে দাবি করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. আলতাব হোসেন বলেন, সম্পত্তির পুরোটাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের এবং তা বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংকের প্রকল্পভুক্ত। তা অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই।
রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, কচুরিপানায় ভরা জলাভূমি বছরের পর বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় এলাকার সমস্ত ময়লা আবর্জনা সেখানে ফেলছে সবাই। নর্দমার পচা দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশও দূষিত হচ্ছে। এ কারনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে একটি আধুনিক শহীদ মিনার নির্মান করে এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে, ওই জমিতে শহীদ মিনারই হবে বলে দাবি তার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ অতুল মন্ডল বলেন, ওই জমি সরকারের এক নং খাস খতিয়ানভুক্ত। মুক্তিযোদ্ধা এবং একাবাসীর দাবি এখানে একটি আধুনিক মানের শহীদ মিনার হোক। কিন্তু একাধিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি তাদের জমি দাবি করায় বিষয়টি ঝুলে আছে। সমঝোতার মাধ্যমে শহীদ মিনার নির্মানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ