মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্সের ৭ লাখ টাকা আত্মসাতের তদন্ত শেষ না হতেই ফের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান। এবার ৮৯২ জন বেকার শিক্ষিত যুবক-যুবতিদের কাছ থেকে স্ট্যাম্প ক্রয় ও ভাতা প্রদানে অফিস খরচের নামে ৩ লক্ষাধিক টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস সূত্র জানায়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ধীন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর আওতায় গৌরনদী উপজেলায় ৯১৯ জন শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুব মহিলা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮৯২ জনকে প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানে যুক্ত করা হয়েছে। কর্মসংস্থানে যুক্ত হওয়া বেকার যুব মহিলা ও যুবকদের প্রতিমাসে ভাতা প্রদান করা হয়। ৮৯২ জনের সকলকেই জুন মাসের ভাতা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৬ সেপ্টেম্বর ৭৫০ জনকে জুলাই এবং আগষ্ট মাসের ভাতা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু বরাদ্দ সল্পতার কারণ ১৪২ জনকে জুলাই ও আগষ্ট মাসের ভাতা দেওয়া হয়নি।
কয়েকজন সুবিধাভোগী অভিযোগ করে বলেন, প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী প্রত্যেককেই ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে বাধ্যতামুলক হলফনামা দিতে হয়েছে। এ সুযোগে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান স্ট্যাম্প কেনা বাবদ প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪ থেকে ৫শ’ টাকা আদায় করেন। স্ট্যাম্প বিক্রেতারা ৩শ’ টাকার ষ্ট্যাম্প ৩শ’ ২০ টাকায় বিক্রি করেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে গড়ে ৪শ’ টাকা করে নিয়ে থাকলে ওই কর্মকর্তা ৬২ হাজার ৪ শ’ ৪০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেন।
এ ছাড়া জুন মাসে ভাতা প্রদানের সময় ৮৯২ জনের কাছ থেকে ১শ’ টাকা করে অফিস খরচ বাবদ ৮৯ হাজার ২ শ’ টাকা এবং জুলাই ও আগষ্ট মাসের ভাতা প্রদানের সময় ৭৫০ জনের কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করে মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার ২শ’ টাকা হাতিয়ে নেয় যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা।
সুবিধাভোগী যুব মহিলা রুনা আক্তার, পাপিয়া আক্তার, হেপী খানম ও যুবক হাবিবুর রহমান বলেন, ভাতা নেওয়ার সময় অফিস খরচের নামে তাদের কাছ থেকে ১শ’ টাকা করে নেয় যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা। এ ছাড়া স্ট্যাম্প কেনার নামেও তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে।
সুবিধাভোগী মো. মঞ্জুরুল আলম জানান, তিনি চাঁদশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত। তার বাড়ির পাশে ধানডোবা কমিউনিটি সেন্টারে যেতে চাইলে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ১ হাজার টাকা দাবী করেন। টাকা না দেয়ায় তাকে বদলী করা হয়নি। কিন্তু তার দুই বন্ধু সিদ্দিকুর রহমানকে দুই হাজার টাকা দিয়ে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়টি বরিশালের উপ-পরিচালক তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছেন। কিন্ত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে অফিসের গোপনীয়তা ফাঁস করার অভিযোগে ২ কর্মচারীকে শোকজ করেছে।
অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, যারা তার থেকে অনৈতিক সুবিধা পান না কিংবা যারা দায়িত্বে ফাঁকি দেন, তারাই তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।
ন্যাশনাল সার্ভিসের প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম-সচিব আবুল হাসান খান বলেন, বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার সংশ্লিস্ট অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার। তাই তিনি গৌরনদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখাকে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
এর আগে গত আগস্টে গৌরনদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ কোর্সে অনিয়ম, প্রশিক্ষকদের পাওনা টাকা না দিয়ে বেনামী প্রশিক্ষক হাজিরাসহ উদ্ধোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত ৬৫ হাজার টাকাসহ ৭ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগের তদন্ত এখনও চলছে।
বিডি প্রতিদিন/১৪ অক্টোবর ২০১৬/হিমেল