কুড়িগ্রামের রাজীবপুরের কোদালকাটি ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজির চাল কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ডিলারের অধীনে ৬৪৫ জনের মধ্যে এখনও তালিকাভুক্ত ৩০০ জন চাল পায়নি। অথচ চাল বিতরণ কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে ১০ দিন আগে। অভিযুক্ত ডিলার স্থানীয় যুবলীগ নেতা হওয়ার কারণে তার বিপক্ষে কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেন না।
সরেজমিনে জানা গেছে, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১৪৬ জন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১০০ জন এবং ১, ২ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৬০ জন তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগী চাল পাননি। তাদের নামে বরাদ্দ প্রায় ১০ টন চাল কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এসব ওয়ার্ডে ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তোতা প্রামাণিককে। চলতি মাসের ৪ ও ৫ অক্টোবর সেপ্টেম্বরের চাল বিতরণ শেষ দেখানো হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে ডিলার ফায়দা লুটছে। এলাকাবাসী ওই ডিলারকে বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন।
ওই ইউনিয়নের ৪ নম্বর (চরসাজাই মণ্ডলপাড়া) ওয়ার্ড সদস্য কামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে ১৬১ জন তালিকাভুক্ত হয়েছে। যারা ১০ টাকায় চাল কিনতে পারবে। কিন্তু ১৬১ জনের মধ্যে মাত্র ১৫ জনকে চাল দেয়া হয়েছে। বাকি ১৪৬ জনকে চাল দেয়া হয়নি। ডিলারের গুদামেও চাল নেই। ডিলার আজ না কাল এভাবে চাল দেওয়ার কথা বলে টালবাহানা শুরু করেছে।’
৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য পাপু মিয়া বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের ১৮০ জনের মধ্যে ১০০ জনকে এখনো চাল দেওয়া হয়নি। চাল চাইতে গেলে ক্ষমতার জোর দেখায় ডিলার। তার ভয়ে সাধারণ মানুষ কথা বলতে সাহস পায় না।’
১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আনার আলী, ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবু সাঈদ মধু ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ফরিদুল ইসলাম একই ধরনের অভিযোগ করেন ডিলারের বিরুদ্ধে।
চরসাজাই মণ্ডলপাড়া গ্রামের তালিকাভুক্ত নজির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘চাইল নেওয়ার জন্য সাত দিন থিকা ঘুরছি। কয় আজ না, কাইল আইসেন। আবার যাইয়া পাই না ডিলারকে। মাইনসে কয়, তোমরা আর চাইল পাবা না। তোমগর চাইল ডিলারের বেইচা খাইছে।’
সাজাই গ্রামের জহুরা বেগম বলেন, ‘শেখের বেটি আমগর ১০ ট্যাহা সের চাইল দেয়, এই কতা হুইনা বুকটা ভুইরা গেছিল। এহন দেহি, দলের চেলা চামচারা গরিবের চাল মাইরা খাবার নাগছে।’ চাল না পেয়ে একই রকম ক্ষোভ প্রকাশ করেন চরসাজাই মন্ডলপাড়ার আবু বক্কর সিদ্দিক, জিয়াউর রহমান, মান উল্লাহ, মাজেদুল ইসলাম, সাজাই গ্রামের রেহানা খাতুন, আব্দুল করিম, এরশাদুল হক, শাহাদৎ হোসেন ও লাল মিয়া।
কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমি ওই ডিলারকে চার দিনের সময় দিয়েছি চাল দিতে। যদি না দিতে পারে তাহলে অভিযোগ দেয়া হবে।’
অভিযুক্ত ডিলার তোতা প্রামাণিক বলেন, ‘কিছু মানুষ চাল পায়নি এটা সত্য। তাই বলে ৩০০ জনই বাদ রয়েছে এটা ঠিক না। ৬৫টি কার্ড হারিয়ে গেছে। যারা চাল পায়নি তাদের চাল দেওয়া হবে।’ কালোবাজারে চাল বিক্রির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমার কানে এসেছে ওই অনিয়মের কথা। তবে এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। পরের মাসে চাল বিতরণের সময় খোঁজ নেয়া হবে।’
বিডি-প্রতিদিন/ ১৬ অক্টোবর, ২০১৬/ আফরোজ